জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যেবেলায় সম্পর্কে ঠাকুমা তরুলতা বেরা (৬৫) কে মুড়ি খাওয়ানোর বাহানা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় একটি শিব মন্দিরের ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে মুণ্ডু কেটে নেয় রাধাকান্ত। তখন রাধাকান্তের বয়স মাত্র ২০ বছর। মুণ্ডু কাটার পর ওই মুণ্ডু নিয়ে পুরো গ্রামে দাপিয়ে বেড়ায় সে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা সাঁকরাইল থানায় বিষয়টি জানালে গ্রামে পৌঁছয় সাঁকরাইল থানার পুলিশ। ঘটনার খবর পেয়ে নোয়াগা গ্রামে পৌঁছয় তৎকালীন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো।
পুলিশ আসতেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল রাধাকান্ত। পরে অবশ্য রাতেই রাধাকান্তকে গ্রেফতার করে সাঁকরাইল থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, রাধাকান্ত ছোট থেকেই খুবই অসুস্থ হয়ে পড়তো। তার পরিবারের লোকজন তাকে সুস্থ করার জন্য ওড়িশার এক ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ওই ওঝা জানিয়েছিলেন এক ডাইনি হল তার অসুস্থতার মূল কারণ। রাধাকান্ত তাঁর সম্পর্কিত ঠাকুমাকেই ডাইনি ভেবে নেয়। ডাইনির হাত থেকে নিজেকে সুস্থ রাখার জন্যই এই ঘটনা ঘটায় রাধাকান্ত।
সাঁকরাইল থানার পুলিশ রাধাকান্তের বিরুদ্ধে খুন, প্রমাণলোপাট সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে ঝাড়গ্রাম আদালতে পেশ করে। তারপর থেকেই ঝাড়গ্রাম আদালতে নির্দেশে ঝাড়গ্রামের বিশেষ সংশোধনাগারে ছিল রাধাকান্ত। এই ঘটনায় রাধাকান্ত ছাড়া পুলিশ নন্দলাল বেরা, কবিতা বেরা ও মিহির বেরা নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত-১ এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছিল। এই ঘটনায় ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের ফলেই গত মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত হয় রাধাকান্ত। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত জামিনে মুক্ত থাকা অপর তিনজনের বিরুদ্ধে কোনও সাক্ষ্য না থাকাই তাদের বেকসুর খালাস হয়।
সরকারি আইনজীবী সত্যজিৎ সিনহা বলেন, “সাঁকরাইল থানার অন্তর্গত নোয়াগা গ্রামে ২০১৭ সালে তরুলতা বেরা নামের এক বৃদ্ধার মুণ্ডুচ্ছেদের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাধাকান্ত বেরার ১৮ জনের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত হয় ।
বুধবার ঘটনায় অপর আরও তিন অভিযুক্তকে সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছে।” রাধাকান্ত আইনজীবী উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান।