Mann Ki Baat 100 Episode : গ্লোবাল হইল বটে, মনের কথায় মন ভরিল না – prime minister narendra modi mann ki baat did not discuss the internal problems of the country here is a detail explanations


প্রশান্ত ভট্টাচার্য
‘মন কি বাত’ মানে মনের কথা। প্রশ্ন হল, মনের কথাটা কার? যিনি বলছেন না যাঁরা শুনছেন? এই দুটো এন্ড অর্থাৎ ডেসপ্যাচ এন্ড আর রিসিভিং এন্ড কিন্তু বিপ্রতীপ হতে পারে। তবে হলেও কিছু সমস্যা নেই। যিনি শোনানোর উদ্দেশে বলে যাচ্ছেন, তিনি ঠিক কিছু শুনতে চান না, শুনতে গেলে আর শোনানো যায় না। এটাই হচ্ছে শ্রুতিমাধ্যমের বৈশিষ্ট্য। অনেকটা ওয়ান ওয়ে। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনেক প্রস্তুতি নিয়ে হয়, রিসার্চ ওয়ার্ক করে হয়, ফলে মোদীরও কিছুটা শোনার থাকে। তবে সিলেক্টিভ তাই নন-অ্যাসিডিক।

Mann Ki Baat 100 Episode : ‘ভীষণ স্পেশাল…’, শততম ‘মন কি বাত’-এর আগে কী টুইট মোদীর?
এত কথা বলা হল, কারণ ৩০ এপ্রিল ‘মন কি বাত’ এর শততম পর্ব সম্প্রচারিত হল। খুব ঝক্কাস ছিল সে অনুষ্ঠান। লোকাল থেকে গ্লোবাল হয়েছে তার চরিত্র। রাষ্ট্রসংঘের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে নাগাল্যান্ডের মোককাং-এ শততম মন কি বাত শুনেছে। নানান ভাবে শততম অনুষ্ঠান নিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। ভারতীয় ২২টি ভাষা বাদ দিয়ে ১১টি বিদেশি ভাষায় সম্প্রচারিত হয়েছে। আকাশবাণীর ৫০০টিরও বেশি কেন্দ্র থেকে তা শোনানো হয় দেশবাসীকে। যদিও চমক বিদেশি ভাষায় শোনানোয়।

Modi Mann ki Baat 100 Episode: শততম ‘মন কি বাত’-এ লাইভ মোদী, রাষ্ট্রসংঘে শোনা যাবে অনুষ্ঠান
ফরাসি, চৈনিক, তিব্বতি ইন্দোনেশিয়ান, বার্মিজ, পশতু, বালুচি, আরবি, ফারসি, সোয়াহিলি ও দারি ভাষায় রবিবার সম্প্রচারিত হয়েছে মোদীর শততম ‘মনের কথা’। দুনিয়াজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই অনুষ্ঠান শুনেছেন। শততম পর্বেও ‘মন কি বাত’-এর প্রধান আকর্ষণ ছিলেন মোদীই। আর হবেই বা না কেন? এক এটি মোদীর ব্রেনচাইল্ড। আর দুই, মোদীর নাটুকে বাচন ভঙ্গি, বিবরণে ভাষার ব্যবহার, শব্দ চয়ন সর্বোপরি উপস্থাপনা — যে কোনও শ্রোতাকে ধরে রাখে। এই বেঁধে ফেলার আর্ট নরেন্দ্র মোদীর মজ্জায় আছে। এখানে তিনি আনপ্যারালাল।

PM Modi Mann Ki Baat 100 Episode: ‘বারবার থামাতে হয়েছে রেকর্ডিং…’, মন কি বাতের শততম পর্বে অভিজ্ঞতা ভাগ মোদীর
এটাকেই বলা যায় political sorority. যার জন্য অন্তঃসার শূন্য বহু কথা মানুষ হাঁ করে গেলে। সবটা শেষ হয়ে গেলে, যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, ঠিক কি বুঝলেন, ওই শ্রোতা দেথবেন তোতলাচ্ছেন। একেই বলে শ্রোতাপ্রিয়তা। যা মোদীর ১০০% আছে। এর জোরেই ‘মন কি বাত’ একশোয় পৌঁছে গেল। এক্কেবারে ভক্তদের বাদ দিয়ে আপনি শ্রোতাদের জনে জনে জিজ্ঞাসা করুন, কী মিলল শততম অনুষ্ঠানে? বেশিরভাগ চুপ করে থাকবেন। জাস্ট মাম। কারণ, তিনি যে প্রত্যাশা নিয়ে রেডিও-র সামনে বসেছিলেন, তা পূ্রণ হয়নি।

Mann Ki Baat: মোদীর মন কি বাতের এপিসোড পিছু খরচ 8 কোটি টাকা? জানুন Fact Check
এমনকী, প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার অনুষ্ঠানটি অন্যদিনের মতো সময় নিয়েও করেননি। সকাল ১১টা থেকে প্রধানমন্ত্রী রেডিয়োতে বলতে শুরু করেন। সাড়ে ১১টার কিছু পরেই শ্রোতাদের কাছ থেকে বিদায় নেন। এই সময়ের মধ্যে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি শ্রোতাদের। বাংলা কথায়, শততম মন কি বাত’এ ‘মন’ ভরেনি আদৌ। যদিও একটি অন্য ভার্সনও আছে। তাঁদের কথায়, আন্তর্জাতিক শ্রোতার কথা মাথায় রেখেই বক্তব্য দীর্ঘায়িত করেননি মোদী। কাট টু সাইজ করে নিয়েছেন। অর্থাৎ মোদী জানেন, যাঁরা কথা কম কাজ বেশির প্রকৃত অনুসারী তাঁরা কথকতায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন না।

Mann Ki Baat 100 Episode : এই পদের জন্য ৫০ বছর আগে ঘর ছাড়িনি: মোদী
আর দুর্জনরা বলছেন, ‘ঢপের কীত্তনে ভারতীয়রাই মজে, বিদেশিরা কেন গাল কাত করে শুনবেন?’ এসব হল রাগের কথা। বিরোধিতার কথা। রাজনীতির কথা। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মন কি বাতের নামে ঝুট কি বাত। নির্বাচনের সময় এক কথা, আর নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে হাওয়া হয়ে যান। কখনও কোনও কথা রাখেন না।’ আবার আমাদের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস মনে করেন, ‘ইতিবাচক পরিবর্তন এবং জনআন্দোলনের প্রশ্নে মন কি বাত অত্যন্ত বড় একটি উদাহরণ।

এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনবদ্য এক সংযোগ করে তুলেছেন, যা মানুষের মধ্যে আস্থা এনেছে এবং জনআন্দোলনের দিশা ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাঁদের একটা ধারণা দিয়েছে। মন কি বাত – এর সাফল্য এখানেই।’ শুধু এ রাজ্যের রাজভবনেই শততম মন কি বাত নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়নি, অন্য রাজ্যেও হয়েছে। হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সব প্রতিষ্ঠানে। সরকারে দাবি, ভারতজুড়ে অনবদ্য ও সুগভীর প্রভাব ফেলেছে শততম মন কি বাত’এর বক্তব্য। সে বিচারে সাফল্যই বটে।

100th Mann Ki Baat: সেলফি উইথ ডটারে লুকিয়ে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও! মন কি বাতের শততম পর্বে ফাঁস মোদীর
শততম নিয়ে ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘জনসংযোগ’ যাত্রা থেকে শততম মন কি বাত’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তীক্ষ্ণ খোঁচা দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। এদিকে মন কি বাতের একশোতম পর্ব উদযাপন করা হচ্ছে! কেউ কেউ খোঁচাচ্ছেন, খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি বলে। কারোর মনে হয়েছে নিষ্ফল আয়োজন। কেন না, ‘শততম’ কোনও সুনির্দিষ্ট দিশা দেখায়নি। বিস্তার হয়েছে, মনের কথার ইতিকথা।

Mann Ki Baat 100 Episode : শততম ‘মন কি বাত’-এ রাজভবনে বিশেষ অনুষ্ঠান, আমন্ত্রিত নন মুখ্যমন্ত্রী
প্রায় ৯ বছরের যাত্রাকে পিছন ফিরে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, কেমন করে তাঁর মাথায় উদয় হয়েছিল, এই অনুষ্ঠানের কথা। প্রথম ঝিলিক দিয়েছিল ১৯৯৮ সালে হিমাচল প্রদেশে বসে। প্রধানমন্ত্রী গল্প শুনিয়েছেন, সেই সময় দলের কাজে তিনি ওই পাহাড়ি রাজ্যে ছিলেন। সেখানে রাস্তার ধারের এক দোকানে তিনি চা খেতে গিয়েছিলেন। চা চাইলে আগে তাঁর দিকে মিষ্টি এগিয়ে দেন দোকানি। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী রেডিয়োতে ভারতের পরমাণু শক্তির পরীক্ষা নিয়ে কিছু বলেছিলেন। তা শুনেই উচ্ছ্বসিত দোকানি সেই দিন চায়ের আগে সবাইকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছিলেন। এটা দেখেই দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় রেডিয়োর জনপ্রিয়তার কথা প্রথম মনে হয়েছিল মোদীর।

Mann Ki Baat 100 Episode : মোদীর ‘মন কি বাত’-এ খরচ ৮৩০কোটি! ভুয়ো তথ্যের অভিযোগে আপ নেতার বিরুদ্ধে FIR দায়ের
এখন প্রযুক্তির অবদানে টিভি সর্বত্রগামী। তবু সহজলভ্য নয় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া হলেও মোবাইল ফোনের বাহুল্যও তেমন চোখে পড়ে না বহু গ্রামাঞ্চলে। কিন্তু দেশের প্রায় প্রতি কোণায় পৌঁছে যেতে পারে বেতার সংযোগ। সেই থেকেই ‘মন কি বাত’-এর জন্ম হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ‘মন কি বাত’ এক আন্দোলনের জন্ম হয়েছে, যে আন্দোলন রাস্তায় নেমে জনজীবন বিপন্ন করে না। যে আন্দোলনের মাধ্যমে কত নতুন প্রকল্প, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও কত নতুন ভাবনা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। শততম’তে তার স্মৃতিচারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

Mann Ki Baat : ‘কেন ​মহিলা কুস্তিগিররা সুরক্ষিত নন?’, ‘মন কি বাত’-এর শততম পর্ব নিয়ে মোদীকে তোপ মহুয়ার
মোদী দাবি করেছেন, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ থেকে শুরু করে ‘স্বচ্ছ ভারত’, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ বা ‘ক্যাচ দ্য রেইন’— একের পর এক গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছে তাঁর এই বেতার-কথার মাধ্যমে। হক কথা। তবু অনেকের খাসকথা, শততম ‘মন কি বাত’-এর মেঘ যতটা গর্জাল, ঠিক ততটা বর্ষাল না। অনেক কথা মোদী বললেন আবার অনেক কথা বললেনও না। বাস্তবিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ মতামত শুনবেন বলে বসেছিলেন শ্রোতারা। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। যদিও এসবই প্রত্যাশা চড়ানোর ব্যাক ওয়াটারের ধাক্কা।

Mann Ki Baat 100 Live : ‘অনুপ্রেরণামূলক নেতা’, শততম ‘মন কি বাত’-এর লাইভে বিশেষ প্রতিক্রিয়া মাধুরী-শাহিদদের
উলটো ভক্তদের একাংশের পালটা দাবি, শততম এই পর্বকে ‘লোকাল’ থেকে ‘গ্লোবাল’এ উন্নীত করা হয়েছিল। বিদেশ থেকেও অনেকে অনুষ্ঠান শুনছিলেন। সে কারণেই এই ‘মন তি বাত’-এ দেশের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি, চাল-ডাল-মানবাধিকার নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। আন্তর্জাতিক শ্রোতার প্রেক্ষিতেই বার্তা সাজিয়েছিলেন শ্রোতামনোরঞ্জক প্রধানমন্ত্রী। ভাল কথা। অথচ এই এপ্রিলের ৩০ তারিখ পর্যন্ত হিসেব কষে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি জানিয়েছে দেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে। তাদের হিসেবে বেকারত্বের হার মার্চের ৭.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৮৩ শতাংশ হয়েছে। হায়! বেকারদের মনের কথা কে শুনবেন!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *