কী ভাবে? স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাইভেট টিউশনের চিত্র সকলের সামনে তুলে ধরতে এঁদের কোচিং ক্লাসের ছবি বা ভিডিয়ো তোলেন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। মোবাইল ক্যামেরায় তোলা ওই ছবি, ভিডিয়োতে দেখা যায়, কোনও শিক্ষকের বাড়ির বাইরে সকাল থেকে সাইকেলের সারি। কারও বা দরজার সামনে ৩০-৪০ জোড়া চটি।
ছাত্রছাত্রীরা ভিড় জমিয়েছে দিদিমণি বা মাস্টারমশাইয়ের কাছে কোচিং নিতে। কেউ কেউ আবার ভিডিয়োগ্রাফি হচ্ছে দেখে পালানোরও চেষ্টা করেন। প্রায় সাড়ে তিনশো সরকারি, সাহায্যপ্রাপ্ত বা পোষিত স্কুলের শিক্ষকের পড়ানোর ছবি-সহ তথ্য গৃহশিক্ষকরা জমা দেন স্কুলশিক্ষা দপ্তর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি বদলায়নি, কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করা হয়নি বলে অভিযোগ।
২০২১ সালে এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে ‘গৃহশিক্ষক কল্যণ সমিতি’ নামে ওই সংগঠন। সেই মামলাতেই গৃহশিক্ষকতায় অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষকদের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, মামলাকারী সংগঠনের তরফে স্কুল শিক্ষকদের নামের যে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে হবে। তালিকা অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য জেনে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে শিক্ষা দপ্তরকে।
ভবিষ্যতে এই প্রবণতা বন্ধে চালাতে হবে কঠোর নজরদারি। আদালতের বক্তব্য, সরকারি নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা, প্রাইভেট টিউশন করতে পারবেন না। কেউ তা করছেন বলে প্রমাণ মিললে সরকারি বিধি অনুযায়ী দপ্তরকে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে বলে নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের।
হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে পেয়ে সংগঠনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সরকারি শিক্ষকদের পর্ষদের জেলা দপ্তরে ডাকা শুরু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সংগঠনটির রাজ্য সম্পাদক দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বন্ধের সরকারি নির্দেশ আমাদের পক্ষেই ছিল। এ বার কোর্টের নির্দেশও আমাদের পক্ষে গেল। তবে এতে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। আমাদের সতর্ক থেকে নতুন নামের তালিকা তৈরির কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
শুক্রবারই সর্বভারতীয় গৃহশিক্ষক সংগঠনের তরফে ছ’শোর উপর স্কুল শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশনে জড়িত থাকার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে।