মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই জাল করে পুলিশের চাকরিতে নিয়োগপত্রের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে দুর্গাপুরে। রবিবার জানা গিয়েছে, এক জন নয়, দুর্গাপুরের ৭ জনের কাছে পুলিশের চাকরির ভুয়ো নিয়োগপত্র এসেছে। ওই নিয়োগপত্রগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সই রয়েছে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের।
দুর্গাপুরের শঙ্করপুরের গোল্ডেন পার্ক, স্টিল টাউনশিপ, মামড়া বাজারের মতো এলাকার যুবকদের কাছে আসা নিয়োগপত্র নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটা টাকার লেনদেন হয়েছে। সূত্রের খবর, এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেপকো টাউনশিপের এক ব্যক্তির উপর নজর রাখছে পুলিশ।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ৭টি নিয়োগপত্র পুলিশ সংগ্রহ করেছে। কোথা থেকে ৭ যুবক এই নিয়োগপত্র পেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসিপি তথাগত পান্ডে বলেন, ‘প্রতিটি নিয়োগপত্রই ফেক। মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার, রাজ্য সরকারের লোগো সব জাল করা হয়েছে।’
জাল নিয়োগপত্রের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে শনিবার রাতে। সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন একটি নিয়োগপত্র। তিনি বলেন, ‘নিয়োগপত্রটি যে ফেক সেটা বুঝেছি। আর কেউ যাতে প্রতারিত না হন তার জন্য নিয়োগপত্রটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছি।’ ওই নিয়োগপত্রটি ছিল শঙ্করপুরের গোল্ডেন পার্ক এলাকার বাসিন্দা ঋতম দেবনাথের নামে।
শঙ্করপুরের ওই বাড়িটিকে গেলে দেখা যায় সেটি তালাবন্ধ। এর পর দুর্গাপুরের সেপকো টাউনশিপে বোনের বাড়িতে আসা ঝুমা দেবনাথ নামে এক মহিলা জানান, নিয়োগপত্র পেয়েছেন তাঁর ছেলে ঋতম। ঝুমার দাবি, ‘বিজ্ঞাপন দেখেই পুলিশের চাকরিতে আবেদন করেছিল ছেলে। পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছে। জুন মাসের ১ তারিখে ঋতম দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ থানায় এএসআই পদে যোগ দেবে।
নিয়োগপত্র ও পুলিশের পরিচয়পত্র সব চলে এসেছে।’ কিন্তু ওই নিয়োগপত্র যে আসলে জাল, তা তাঁকে জানাতে বিব্রত ঝুমা বলেন, ‘এটা ফেক না অরিজিনাল সেটা আমরা জানি না। আমাদের কাছে নিয়োগপত্র এসেছে। এসব নিয়ে খবর করলে ছেলের চাকরি পেতে সমস্যা হবে।’ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, নিয়োগপত্রের খাম দেখতে অবিকল সরকারি চিঠির মতোই। তাতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের লোগো ও সিল রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পুলিশে শুধু নয়, মেট্রো রেল, আইআরসিটিসি, কলকাতা কর্পোরেশন সমেত একাধিক সরকারি সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্রটি মূলত চলছে কোচবিহার থেকে। রাজ্য জুড়ে এই প্রতারণা চক্রটি জাল বিছিয়ে ইতিমধ্যে আত্মসাৎ করেছে কয়েক কোটি টাকা। এই চক্রের খপ্পরে পড়েন দুর্গাপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ মুখোপাধ্যায় নামে এক যুবক।
তিনি বলেন, ‘৩ মাস আগে মোবাইলে এ টু জেড নামে একটি সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখি। এই সংস্থা দাবি করেছে, টাকার বিনিময়ে তারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি করে দেবে। বিজ্ঞাপনের লিঙ্কে ক্লিক করতেই আমি একটি হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপে যুক্ত হয়ে যাই। সেখানে বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পোস্ট হতে থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকে চাকরিপ্রার্থীরা টাকা দিলেই তার স্ক্রিনশট দেখানো হয়।
এসব দেখে আমিও চাকরির জন্য টাকা দেব বলে সিদ্ধান্ত নিই।’ কিন্তু পরে প্রসেনজিৎ কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে বুঝতে পারেন, এ ভাবে সরকারি চাকরি হয় না। এর পর তিনি আর টাকা দেননি। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলার তথা তৃণমূল নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত কেউ থাকলে ব্যবস্থা নিক পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের সই জাল করে চাকরির নামে যারা প্রতারণা করছে, তাদের কোনও ভাবে রেয়াত করা যাবে না।’