দুর্গাপুরের NIT-তে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁর এই মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে শিল্পাঞ্চলে। দুর্গাপুরের বিজ্ঞানের বিশিষ্ট শিক্ষক নুরুল হক বলেছেন, “কোন ধর্মগ্রন্থের দর্শনে বর্ণিত থাকতেই পারে এ তথ্য, কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত ভাবে যা গোটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতিলাভ করেছে,অর্থাৎ আইনস্টাইনের এই থিয়োরি , সেটাকেই মান্যতা দিতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আইনস্টাইনের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের থিয়োরিই শেখাতে হবে ছাত্রদের।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, “বাংলা ভাষা সংস্কৃত , আরবী,ফারসি ইত্যাদি বহু ভাষার শব্দ নিয়েই সমৃদ্ধ হয়েছে ও এগিয়ে চলেছে। সেখানে কেউ খালাম্মা,কেউ ফুফা,কেউ মাসি বলবে , সবটাই গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে।”
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় রাজনৈতিক মহলে। বিশিষ্ট সিপিআইএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার বলেন ,” এটা আরএসএসের এজেন্ডা , তাই এই কথা বলেছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী , নতুন শিক্ষানীতির নামে শিক্ষাকে বেসরকারীকরন , গৈরিকীকরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার”।
“শুধু আইনস্টাইনই নয় , ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্বকেও অস্বীকার করে এরা , তাই সিবিএসইর পাঠ্যক্রম থেকে একে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এনসিই আর টি,” মন্তব্য বাম নেতার। তাঁর কটাক্ষ,” ডারউইনের বিবর্তনবাদে বানর থেকে মানুষ যে হয়েছে , বানরের লেজটা মেরুদন্ডের একদম শেষে ছোট হয়ে রয়ে গিয়েছে, যাকে জীবন বিজ্ঞানের ভাষায় ককসিস বলা হয়, আমাদের দুর্ভাগ্য যে এমন কিছু লোক দেশ শাসন করছে , যাদের লেজ এখনও ককসিসে পরিনত হয়নি,লেজই আছে।” ‘খালাম্মা’ বিতর্কে বাম নেতার তীব্র আক্রমণ ,”ওঁর ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব থাকার কোন অধিকার আছে , ওরা বি আর আম্বেদকরকে মানে না , ওরা মোগলদের কীর্তিকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চায়, কিন্তু পাঠ্যক্রম বদলালেও ইতিহাসকে কখনও পাল্টানো যায় না।”
এই ইস্যুতে সরব হয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন,” বিজেপি বরাবরই জাত-ধর্মের রাজনীতি করে এসেছে , এটা নতুন কিছু নয় , শিক্ষায় গৈরিকীকরণের পাশাপাশি বিজেপি এখন বিশেষ এক সম্প্রদায়কে ভয় পেতে শুরু করেছে , তাই বারংবার বলছে হিন্দু খতরে মে হ্যায়,কিন্তু দেশের কাছে এখন বড় খতরা নরেন্দ্র মোদী।” তিনি আরও বলেন, যে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম, শিখ সহ সব সম্প্রদায়ের যে অবদান রয়েছে , তাকে কি ভোলা সম্ভব , আসলে এরা ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তীব্র আক্রমণ শানালেন । তিনি বলেন,” আমরা হিন্দুরা বড় ভাই , সংখ্যালঘুরা ছোট ভাইয়ের মতন , তাদের খেয়াল বড় ভাই হিসেবে আমাদের রাখতেই হবে। ওঁকে (শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী) মনে রাখতে হবে কালিদাস যে ডালে বসেছিল , সে ডালকেই কেটেছিল,উনি এই মন্তব্য করে একটা জাতিকে ছোট করেছেন।” আইনস্টাইন থিয়োরি বিতর্কে তৃণমূল নেতার সাফ জবাব,” উনি পড়াশোনা জানলেও বিশদে কিছু শেখেননি , তাই এই মন্তব্য করেছেন,আদপে এরা মুখ্যু-গর্দভ,তাই এই আবোলতাবোল দাবি করছেন।”