এ বার স্বাস্থ্য দপ্তরের গ্রুপ-ডি কর্মীদের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠল আর্থিক অনিয়মের। ২০ লক্ষ টাকারও বেশি দিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের গ্রুপ-ডি কর্মী হিসেবে চাকরি না-মেলায় এ বার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার যুবক দেবাশিস মণ্ডল। দেবাশিসের অভিযোগের তির ত্রিলোচন মান্না, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও সুখেন দাস- এই তিন জনের দিকে। পাঁশকু়ডা থানায় দায়ের করা তাঁর অভিযোগে দেবাশিস জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা শলাপরামর্শ করে তাঁকে ও আরও পাঁচ জন যুবককে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিকাশ ভবনে নিয়ে গিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই করান।
দেবাশিসকে ২০২০-র ১৮ ডিসেম্বর তমলুক হাসপাতালে যোগ দেওয়ার জন্য একটি নিয়োগপত্র এবং আইডি কার্ডও দেওয়া হয়। তবে ওই সমস্ত নথিই ছিল ভুয়ো- এমনটাই দেবাশিস জানিয়েছেন। হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সচিব প্রভাস উকিল বলেন, ‘সাম্প্রতিকালের মধ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরে গ্রুপ-ডি পদে কোনও নিয়োগই হয়নি।’ মাধ্যমিক পাশ দেবাশিস সোমবার বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি পাওয়ার লোভে পুরো পথে বসেছি। মায়ের সব গয়না বেচে, সমস্ত সঞ্চয় ভেঙে মোট ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দফায় দফায় ওদের হাতে তুলে দিয়েছি।’
তাঁর কথায়, ‘প্রথম দু’দফায় যথাক্রমে ৬০ হাজার ও ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম বিশ্বজিৎকে। এর পর ত্রিলোচনকে পর্যায়ক্রমে ১ লক্ষ ৪০ হাজার, সাড়ে ৪ লক্ষ, ৩ লক্ষ, দেড় লক্ষ, আড়াই লক্ষ ও ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি।’ দেবাশিসের আক্ষেপ, ‘চাকরি না-পেয়ে টাকা ফেরত চেয়েছিলাম। কিন্তু ২০২১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত মাত্র ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। তার পর আর কোনও টাকা পাইনি। এখন টাকা চাইলেই ভয় দেখাচ্ছে।’ দেবাশিসের আইনজীবী কার্তিকচন্দ্র কাপাস বলছেন, ‘প্রশাসনের উচিত, অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া।’
বিশ্বজিতের মাধ্যমেই যে প্রথমে ত্রিলোচন ও পরে সুখেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল, তা জানিয়েছেন দেবাশিস। তিনি বলেন, ‘ওরা বলেছিল, এখন টেন্ডার করে চাকরির বিলি বন্দোবস্ত হয়। যথাস্থানে দক্ষিণা দিলেই চাকরি মিলবে।’ ত্রিলোচন ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০০ টাকার একটি স্টাম্প পেপারে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন যে, তিনি স্বাস্থ্য দপ্তরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দফায় দফায় মোট ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন দেবাশিসের কাছ থেকে।
সেই টাকা সেই সময়ে চার মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ত্রিলোচনের পাল্টা দাবি, ‘কয়েক জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দেবাশিস আমাকে জোর করে ওই স্ট্যাম্প পেপারে লেখা বয়ানে সই করতে বাধ্য করেছিল।’ সে ক্ষেত্রে কোনও আইনি ব্যবস্থা তিনি নেননি কেন, তার কোনও সদুত্তর ত্রিলোচনের কাছে মেলেনি।
পেশায় কোয়াক ডাক্তার বিশ্বজিৎ ও ত্রিলোচন এখন সব দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন সুখেনের উপর। বিশ্বজিতের কথায়, ‘সুখেন কলকাতায় থাকেন, খুবই প্রভাবশালী। আমি কিন্তু ত্রিলোচনের কাছে দেবাশিসকে নিয়ে গিয়ে বুঝেশুনে পা ফেলে চলতে বলে ওকে সতর্ক করেছিলাম।’ ত্রিলোচনের কথায়, ‘দেবাশিস বা অন্য ছেলেরা চাকরি পেলে সামান্য কিছু টাকা হয়তো বা পেতাম। তবে মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যেই আমি এগিয়েছিলাম।’ দক্ষিণ শহরতলিতে সুখেনের যে ঠিকানা মিলেছিল, সেখানে সোমবার খোঁজখবর নিয়েও তাঁর হদিশ মেলেনি।