এমনই সব রটনা। করোনার জেরে ২০২০-র মার্চে বাংলা-সহ গোটা দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পর অফিস-আদালত সবই বন্ধ। সব চেয়ে বড় কথা, দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ ছিল গণ পরিবহণ। প্রাথমিক ভাবেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, গণ পরিবহণ ও বায়ুদূষণের অন্যান্য যে সব কারণ- সেগুলোর অনুপস্থিতির ফলেই বায়ুদূষণের মাত্রা নজিরবিহীন ভাবে কমে গিয়েছে লকডাউনের সময়ে আর সেই জন্যই প্রকৃতি এতটা পরিষ্কার।
তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে বায়ুদূষণ ঠিক কতটা কমেছিল? বালুরঘাট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন- এটা কি সত্যিই খুব অস্বাভাবিক? এই বিষয়েই গবেষণা চালিয়েছিলেন খড়্গপুর আইআইটি-র সেন্টার ফর ওশান, রিভার, অ্যাটমোস্ফিয়ার অ্যান্ড ল্যান্ড সায়েন্সের (কোরাল) অধ্যাপক ও গবেষক জয়নারায়ণন কুট্টিপ্পুরাথ, বিকাশকুমার প্যাটেল ও গোপালকৃষ্ণ পিল্লাই গোপীকৃষ্ণণ এবং পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির হামজা বারিকোদেন। দুই সংস্থার মিলিত গবেষণায় দেখা গেল, কোভিড-নাইনটিনের হাজার খারাপ দিক থাকলেও সেই সময়ে লকডাউনের দৌলতে বায়ুদূষণে নজিরবিহীন লাগাম পড়েছিল।
লকডাউনের সময়ে বাতাসের বিভিন্ন স্তর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তার উপর পরীক্ষা চালিয়ে কী পাওয়া গিয়েছে? খড়্গপুর আইআইটির কোরাল বিভাগের জয়নারায়ণন কুট্টিপ্পুরাথ বলছেন, ‘গাঙ্গেয় সমতলে লকডাউনের সময়ে সব চেয়ে বেশি কমে গিয়েছিল সালফার ডাই-অক্সাইডের দূষণ- প্রায় ৩০ শতাংশ!’ শুধু সালফার ডাই-অক্সাইডের দূষণই কমেনি, একই সঙ্গে কমে গিয়েছিল বাতাসে ভাসমান এরোসল কণার পরিমাণও- ১০ থেকে ২০ শতাংশ। অধ্যাপক জয়নায়ায়ণনের কথায়, ‘বায়ুদূষণের কমে যাওয়ার আরও একটি সুফল পাওয়া গিয়েছিল ওই সময়ে। গড় তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল অন্তত ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
এর পাশাপাশি, গবেষণায় ধরা পড়েছে সেই সময়কার আরও একটি ইতিবাচক দিক। লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এর ফলে দূষণ কমে অনেকটা শুধরে যায় স্থানীয় আবহাওয়াগত পরিস্থিতিও।
গবেষণা চালানো ওই বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ‘লকডাউনের সময়ে আমরা বাধ্য হয়েই দৈনন্দিন জীবন যাপনে অনেক কিছু বর্জন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তার ফলে আমাদের অনেক কিছু আটকে গিয়েছিল, এমনটাও নয়। বরং, পরিবেশের উপকার হয়েছিল। আমরা এখনও চাইলে সেই অভ্যাসগুলো বর্জন করে পরিবেশের উন্নতি ঘটাতেই পারি।’
