দু’দিন আগেই মালদহে গিয়ে বিএসএফের ক্ষমতার পরিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিএসএফের বাড়াবাড়ি নিয়েও আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার পঁচিশে বৈশাখ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোলের অুনষ্ঠান মঞ্চে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমিত শাহের সামনেই বিএসএফের ক্ষমতার পরিধি ৫০ কিলোমিটার বৃদ্ধির জন্য তাঁর প্রশংসা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সম্প্রতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে গোরু পাচার মামলায় বিএসএফকেও সমান ভাবে দায়ী করে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। কিন্তু এ দিন বিএসএফের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যই সীমান্তে গোরু পাচার বন্ধ হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান শুভেন্দু। এ দিন অমিত শাহও সীমান্ত সুরক্ষায় বিএসএফ জওয়ানদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আগে বর্ডারে পরিকাঠামো ছিল না। এখন বেড়েছে। বিএসএফের জন্যই দেশের মানুষ দিনরাত সুরক্ষিত থাকতে পারেন।’
শুভেন্দু বলেন, ‘রাজ্যের ৭২টি সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতার দেওয়ার জন্য বিএসএফ জমি চেয়েছে। রাজনীতির মধ্যে না গিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব সীমান্ত এলাকার মানুষের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।’ যদিও বিএসএফের এই ক্ষমতাবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘বিএসএফের হাতে ক’দিন আগে নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে শীতলখুচিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ সব নিয়ে কি কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি এর সমালোচনা করেছেন? মানুষের উপর নির্যাতন করার জন্য কি বিএসএফের এলাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?’ বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘রাজ্যের সীমান্ত এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান না জেনেই মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। কাঁটাতার থাকা অবস্থাতেই বিএসএফের মদতে পাচার হচ্ছে।’
এ দিন নির্দিষ্ট সময়ের আধঘণ্টা পরে পেট্রাপোলে পৌঁছন অমিত শাহ। কিন্তু, সরকারি অনুষ্ঠানে শাহ আসার আগে এবং পরে জয় শ্রীরাম স্লোগান তোলেন বিজেপি কর্মীরা। ফলে সরকারি অনুষ্ঠানে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। এ দিন মঞ্চে আসার আগেই পেট্রাপোল স্থলবন্দরের দ্বিতীয় কার্গো গেট তৈরির ভূমিপুজো সারেন অমিত শাহ। পেট্রাপোল থানার নতুন ভবনেরও উদ্বোধন করেন তিনি। এ দিনের মঞ্চ থেকেই উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গে ১০৮ কোটি টাকা খরচে বিএসএফের সীমান্তচৌকি, ওয়াচ টাওয়ার, হস্টেল-সহ সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন অমিত শাহ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এসেও রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধে উল্লেখ রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। এমন একটা দিনে আমি দুই দেশের সীমান্তে আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি।’ পেট্রাপোল স্থলবন্দরে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০-৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করে। একটি কার্গো গেট দিয়ে যাতায়াতের ফলে দীর্ঘ সময় লেগে যেত এতদিন। এ দিন দ্বিতীয় কার্গো গেটের ভূমিপুজো সেরে অমিত শাহ বলেন, ‘এটি তৈরি হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে আরও গতি আসবে।’