একসময় হাতে বোনা মাদুরের জন্য সারা রাজ্যে সুনাম ছিল চারঘাট বাজারের। বেশ কয়েক বছর আগেও চারঘাট মাদুর বাজার গমগম করত মাদুর শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ২৫-৩০ জন ব্যবসায়ী এই বাজারে মাদুরের ব্যবসা করলেও, আজ সেই সংখ্যা একজনে নেমে এসেছে।
মাদুর শিল্পকে আদৌ টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন এই বাজারের একমাত্র মাদুর ব্যবসায়ী সুভাষ সরকার। তিনি বলেন, ‘এক সময় মছলন্দপুর অঞ্চলে যমুনা নদীর ধারে মাদুর কাঠির চাষ হত। চারঘাট এলাকার কয়েক হাজার পরিবার মাদুর কাঠির চাষ এবং মাদুর বোনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’
যদিও মাদুর সেই সোনার দিন এখন আর নেই। হাতে বোনা মাদুরের জায়গায় প্লাস্টিক মাদুর বাজার দখল করায় অস্তিত্ব সংকটের মুখে এই শিল্প। চাহিদা কমায় মাদুর শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়েছে একাধিক পরিবার। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকায় শতকষ্টেও তিনি মাদুর ব্যবসা ছেড়ে বেরতে পারছেন না বলেই জানিয়েছেন সুভাষ।
তিনি বলেন, ‘আগে নিজে মাদুর বুনলেও এখন বাদুরিয়ার আড়বেড়িয়া, পুটিমারী, কেদোগোপালপুর থেকে মাদুর কিনে এনে কোনমতে মাদুরের ব্যবসাটা টিকিয়ে রেখেছি। মাদুর কাঠির চাষও এখন কমে গিয়েছে। এলাকায় আর মাদুর তৈরি না হওয়ায় বেশি দাম দিয়ে আনতে হচ্ছে হাতে বোনা মাদুর। ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা জোড়া হিসেবে এই মাদুর আনা হচ্ছে। যাতায়াতের খরচ মিলিয়ে লাভ তেমন থাকছে না বললেই চলে।’
হাতে বোনা মাদুর পরিবেশ বান্ধব। এই মাদুর অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। মে অনেকটাই সস্তা হাওয়ায় বাজারগুলিতে হাতে বোনা মাদুরে তুলনায় প্লাস্টিক মাদুরের বিক্রি বেশি। চারঘাটের মাদুর শিল্পীদের একটাই আর্জি, বাংলার এই মাদুর শিল্পকে বাঁচাতে যদি সরকার কোন উদ্যোগ নেয়, তাহলে আবার অনেকেই এই পুরনো পেশায় ফিরে আসবে। আবারও স্বমহিমায় ফিরবে বাংলার হাতে বোনা মাদুর শিল্প।