উল্টে, আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে। বিচারক গোয়েন্দাদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘চার্জশিটে অনেকেরই নাম রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন অভিযুক্তদের কোর্টে আনা যাচ্ছে না? শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গোটা দেশের নজর রয়েছে। তদন্ত কবে শেষ হবে?’
সম্প্রতি বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের বাড়ি ঘিরে তল্লাশি চালান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ওই সময়ে তিনি দু’টি মোবাইল ফোন পুকুরে ফেলে দেন বলে দাবি করে সিবিআই। এদিন সেই তথ্য মিথ্যা রটনা বলে আইনি যুক্তি তুলে ধরেন তাঁর কৌঁসুলি বিপ্লব গোস্বামী। তিনি সওয়ালে বলেন, ‘জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে তল্লাশির সময় কী কী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার কোনও ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছিল? কোনও প্রমাণ দেখাতে পারবেন তদন্তকারী অফিসারেরা? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করার সময়ে ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে।’
এর পরেই সিবিআইয়ের তরফে বিচারককে বাজেয়াপ্ত সামগ্রীর তালিকা সহ সিডি দেখানো হয়। কেন্দ্রীয় সংস্থার কৌঁসুলি দাবি করেন, ‘নিয়ম মেনেই তল্লাশি হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মারফত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে শান্তিপ্রসাদের যোগসাজশ ছিল।’ ধৃত দুজনের মাধ্যমে কতজনের চাকরি হয়েছে, কী ভাবেই বা তাঁরা এই কাজ করলেন, সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও সমস্ত তথ্য সিডি-তে রয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়।
অন্যদিকে শান্তিপ্রসাদের কৌঁসুলি সঞ্জয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘সিবিআই এখন কিছু না পেয়ে আটকে রাখার জন্য শান্তিপ্রসাদের সঙ্গে যোগসাজশের গল্প সামনে আনছে। কিন্তু তাঁরা যে সব নথিপত্র পেয়েছে, তার ফরেন্সিক রিপোর্ট কি হাতে এসেছে? তা না পেয়েই কী ভাবে চার্জশিট দিল তদন্তকারী সংস্থা। ওই ডকুমেন্ট ভুয়ো কি না, তাও তো প্রমাণ হয়নি।’
এদিন জীবনকৃষ্ণ, শান্তিপ্রসাদ ছাড়াও নবম-দশমের মামলায় এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, এজেন্ট শেখ শাহিদ ইমাম, শেখ আলি ইমাম, প্রসন্ন রায়, সুব্রত সামন্ত এবং কৌশিক ঘোষকেও পেশ করা হয়। এদিন প্রসন্ন রায়কে গ্রুপ- ডি মামলায় নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে সিবিআই। বিচারক তা মঞ্জুর করে তাঁকে ১৫ মে পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এদিন, অভিযুক্তদের আইনজীবীদের তরফেও প্রশ্ন তোলা হয়, ‘চার্জশিটে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা বাইরে থাকলে যদি তদন্তের প্রভাব না পড়ে, তা হলে আমাদের মক্কেলকের শর্ত সাপেক্ষে জামিন দিলে কী ক্ষতি হবে। তাঁরা তদন্তে সহযোগিতাও করতে রাজি রয়েছেন।’ সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়, ‘একজন এজেন্ট অন্যজনকে টাকা দিয়েছেন, তিনি আবার আরেকজনকে টাকা দিয়েছেন। এ ভাবে একটি চেন রয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও এরকম ধারাবাহিকতা পাওয়া গিয়েছে। জামিন হলে তদন্তে প্রভাব পড়বে।’