থাকেন মুর্শিদাবাদে, ঠিকানা কলকাতার, আর পিস্তলের লাইসেন্সের ছাড়পত্র ন্যাগাল্যান্ড পুলিশের! বয়স ২১ পেরোয়নি! তা সত্ত্বেও কলকাতার তিলজলার ঠিকানা ব্যবহার করে নাগাল্যান্ড পুলিশের ছাড়পত্রে গোরুপাচার মামলার মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের হাতে চলে এসেছিল পিস্তল। ওই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে বয়সের নিয়ম মানা হয়নি বলেও দাবি সিবিআইয়ের।
হঠাৎ এমন কী হয়েছিল যে, এত অল্প বয়সে পিস্তলের প্রয়োজন পড়ল এনামুলের? নিয়ম লঙ্ঘনের পরেও কী ভাবে ন্যাগাল্যান্ড পুলিশের সূত্রে ‘অল ইন্ডিয়া পারমিট’ সহ পিস্তল ব্যবহারের অনুমতি পেলেন এনামুল? তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। শুধু নাগাল্যান্ড থেকেই নয়, কলকাতা পুলিশও এমানুলকে আত্মরক্ষার জন্য পিস্তল ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছিল বলে চার্জশিটে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই সূত্রের খবর, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরের ডেপুটি কমিশনারের অফিস থেকে ১৯৯৭ সালের ২০ অগস্ট অল ইন্ডিয়া পারমিট সহ এলামুলকে পিস্তল লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এমানুলের আবেদনপত্রে ঠিকানা ছিল ৭২এ, তিলজলা রোড (বেনিয়াপুকুর)। পরে ডিমাপুরের পুলিশ ২০১৭ সালে ওই পিস্তলের লাইসেন্স রিনিউ করে। তাতে কলকাতার পাশাপাশি ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল ইনডাস ভিলেজ, এইচ/৫৭৪এ রাজহুপে, ডিমাপুর।
১৯৯৭ সালে যখন তাঁকে ন্যাগাল্যান্ডের পুলিশ- প্রশাসন অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল, তখন এনামুলের বয়স ২১ হয়নি বলে চার্জশিটে তথ্য পেশ করেছে সিবিআই। গোয়েন্দাদের দাবি, কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের ডেপুটি কমিশনারের অফিস থেকে তাঁকে যে পিস্তল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেটি ছিল মেড-ইন-ইতালি (৩২ বোর)। ওই পিস্তলটি ব্যবহারের অনুমতি ছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত!
গোয়েন্দারা মনে করছেন, গোরু পাচারের কারবার চালাতে প্রথম থেকেই আঁটঘাঁট বেধে নেমেছিলেন এনামুল। এ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যেমন ওঠাবসা ছিল তাঁর, তেমনই ন্যাগালান্ডের ডিমাপুরের কোনও পুলিশ কর্তার সঙ্গে যাঁর যোগসাজশ ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোরুপাচার ব্যবসায় একাই ‘বাদশা’ হওয়ার জন্য, গ্রামবাসীদের একাংশকে এনডিপিএস (মাদক মামলা) কেস দেওয়ার হুমকি দিয়ে নিজের দলে টেনে নিয়ে ছিলেন এনামুল হক। মূলত ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে গোরুপাচারের যুক্ত ছিলেন তিনি। ওই সময়ে বিএসএফ-এর ৩৬ বর্ডার আউট পোস্টের (বিওপি) দায়িত্বে ছিলেন সতীশ কুমার। সে কারণে পাচারে কোনও সমস্যা হতো না।
মুর্শিদাবাদের সীমান্ত গ্রামগুলির একাংশের বাসিন্দারা ‘অসংগঠিত’ ভাবে গোরু পাচার করতেন বাংলাদেশে। সিবিআই চার্জশিটে দাবি করেছে, এনামুল স্থানীয় গোরুপাচারকারীদের জানিয়ে দেন, ব্যবসা করতে হলে তাঁর সিন্ডিকেটের হয়েই কাজ করতে হবে। মাদক মামলা ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যবহার করতেন বলে অভিযোগ।
২০১৫ সালের পর থেকে আব্দুল লতিফ শেখ, মহম্মদ আতিকুর কুরেশি, মহম্মদ গোলাম মুস্তফা, আনারুল শেখ, ইসমাইল শেখ, জেনারুল এবং আজারুলকে নিয়ে গোরুপাচারের সিন্ডিকেট তৈরি করে এনামুল।