বিক্ষোভরতদের দাবি, তাঁদের অ্যাপটিটিউড টেস্ট যে হয়েছিল, তার প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু কেবল মামলাকারীদের কথা শুনেই কলকাতা হাইকোর্ট তার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এ দিন সল্টলেকের বিক্ষোভকারীরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালের সঙ্গে দেখা করেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, শুক্রবারের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুক্রবার একলপ্তে ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দেন। অভিযোগ, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রশিক্ষণহীন ছিলেন এবং চাকরি পাওয়ার আগে তাঁদের যোগ্যতা প্রমাণে কোনও রকম অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি। যদিও ক্ষুব্ধ চাকরিহারা শিক্ষকরা এই রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক যুক্তি পেশ করেছেন।
ইতিমধ্যেই তাঁরা তৈরি করেছেন ‘২০১৭ শিক্ষক-শিক্ষিকা একতা মঞ্চ’। সেই মঞ্চের যুক্তি, অ্যাপটিটিউড টেস্টের কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা-ফুটেজ নেই। তা হলে টেস্ট যে হয়নি, সেটা কী ভাবে প্রমাণিত হলো? মঞ্চের প্রশ্ন, ৩৬ হাজার শিক্ষকের মধ্যে যাঁরা অনিয়ম ছাড়া চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি কেন বাতিল হবে? তাঁরা এনসিইআরটি-র নিয়ম অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার পর ট্রেনিং নিয়েছেন। মঞ্চের যুক্তি, আদালত একবারও রায়ে বলেনি যে, সব প্রার্থীই ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তা হলে সবার চাকরি কেন বাতিল?
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ যদি নিয়োগের সময়ে অ্যাপটিটিউড টেস্ট না-নিয়ে থাকে, তা হলে সেটা সব প্রার্থীর দুর্নীতি কী করে হয়? সেটা তো পদ্ধতিগত ত্রুটি। সে ক্ষেত্রে যাঁরা ইন্টারভিউ নিয়েছেন, তাঁদেরও তো সমান ভাবে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত। মঞ্চের আরও প্রশ্ন, মোট ৪২ হাজারের মধ্যে যে সাড়ে ৬ হাজারের চাকরি টিকে গেল, আদালত কি নিশ্চিত, তাঁদের কেউ ঘুষ দিয়ে চাকরি পাননি? তদন্তকারী সংস্থা ইডি-সিবিআই এতদিন তদন্তের পরও টাকার বিনিময়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের তালিকা কেন প্রকাশ করতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলেছে ওই একতা মঞ্চ।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘ওঁরা আমার সঙ্গে করেছিলেন। ওঁদের দাবি-দাওয়ার কথা শুনেছি।’ এ দিন পর্ষদ সভাপতির সঙ্গে দেখা করার পর একতা মঞ্চের সভাপতি তথা হুগলি জেলার প্রাথমিক শিক্ষক শেখ নাসিম আলি বলেন, ‘আমরা চাই, মানবিক ভাবে রায় পুনর্বিবেচনা করুক আদালত। পর্ষদ আমাদের পাশে আছে।
তারা তাদের মতো লড়াই করবে। আমরাও উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ এ দিন কৃষ্ণনগরে, নদিয়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হয়ে শ’দুয়েক চাকরিহারা শিক্ষক বিক্ষোভ দেখান। আন্দোলনকারীদের পক্ষে দিব্যেন্দু বসুর দাবি, ‘নদিয়া জেলায় প্রায় দেড় হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। প্রত্যেকেই অ্যাপটিটিউড টেস্ট এবং ভাইভায় যোগ্যতা মানে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছেন।’ শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কের সামনেও এ দিন বিক্ষোভ হয়।
যদিও এর পাল্টা ২০১৪ সালের টেট পাশ করা, ধর্নারত চাকরিপ্রার্থীদের তরফে অচিন্ত্য সামন্ত বলেন, ‘সব দিক খতিয়ে দেখেই আদালত রায় দিয়েছে। মানিক ভট্টাচার্যের সময়ে পর্ষদ মামলাকে ভুল পথে চালিত করেছে। আর বর্তমানে অযোগ্য শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে পর্ষদ তথা রাজ্য সরকার বার্তা দিতে চাইছে যে, তারা দুর্নীতির সঙ্গেই আছে, যোগ্যদের পাশে নেই!’