অর্নবাংশু নিয়োগী: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গেল শিলিগুড়ির ববিতা সরকারের। মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি চলে যাওয়ার পর হাইকোর্টের নির্দেশে সেই জায়গায় নিয়োগ পেয়েছিলেন ববিতা সরকার। এবার সেই জায়গায় চাকরি পাচ্ছেন অনামিকা রায়। অভিযোগ, ববিতা তাঁর অ্য়াকাডেমিক স্কোর নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। এনিয়ে তাঁকে কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্য়ায়।
আরও পড়ুন-এসএসসি-র ভুলে ববিতার চাকরি? নিয়োগ মামলায় নয়া নাটকীয় মোড়!
চাকরি যাওয়ার কথা শোনার পড়েই ভেঙে পড়েন ববিতা সরকার। বিষয়টি এতদিন আমিও বুঝতে পারিনি। কমিশন ভুল করে ২ নম্বর বেশি দিয়েছিল। অনেকে এতদিন চাকরি করেছেন। তারা কেউ কারও নম্বর জানে না। আমরা শুধু একটি তালিকা পেয়েছিলাম। সেই লিস্ট অনুযায়ী আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আমার কেসেই বলা হয় কে কত নম্বর পেয়েছে তা প্রকাশ করা হোক। যদি নাইন টেনের বিষয়টি দেখেন তাহলে আমার নম্বর ঠিকই রয়েছে। আর যদি ইনেভশ্রেন ও টুয়েলভ দেখি তাহলে আমার ২ নম্বর বেশি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমি আমার আইনজীবীকে জানাই। কেন এটা কমিশন করেছে তা বুঝতে পারছি না। ওই ২ নম্বর কম হলে আমরা র্যাঙ্ক পিছিয়ে যায়। আমার লড়াইয়ের আর বাস্তবতা থাকে না। আমি লড়াই করেছিলাম এসএসসিতে অনিময়মের বিরুদ্ধে। চাকরির দাবি আমি করিনি। এই মামলার জন্য অনেক খেটেছি। যাতায়াতের জন্য পুরনো গাড়ি কিনেছি। আপাতত ১১ লাখ টাকা কালকের মধ্যে ফেরত দিয়ে দেব। বাকি টাকা দেওয়ার জন্য তিন মাস সময়ে দেওয়া হোক।
এদিকে, রায় দিতে গিয়ে ববিতাকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বহু অভিযোগ থাকার পরও আপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারত। সেটা আদালতকে এইটুকু ক্রেডিট দিন। এই কদিন যে বেতন পেয়েছেন তা ফেরত নেওয়া হচ্ছে না। এটুকু সান্তনা নিয়ে আদালত থেকে যান। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিন। আপনি রেজিস্টারকে ১৫ লাখ টাকা জমা দেবেন।
ববিতা নন, চাকরির প্রকৃত দাবিদার তিনিই। এই দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন অনামিকা রায়। অনামিকার দাবি, ফর্ম পূরণের সময় ববিতা লিখেছিলেন যে তিনি স্নাতক স্তরে ৮০০ র মধ্যে ৪৪০ পেয়েছেন, এবং শতাংশের হিসাবে ৬০ শতাংশ পেয়েছেন। যদি হিসাব করে দেখা যাচ্ছে যে শতাংশের হিসাবে এটি ৬০ শতাংশের কম। অনামিকার আরও দাবি, কেউ যদি ৬০ শতাংশ বা তার বেশি পান তাহলে তিনি ৮ নম্বর পাবেন। আর কেউ যদি ৪৫ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ পান তাহলে তিনি ৬ নম্বর পাবেন। তাহলে হিসাব অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রের ববিতার প্রাপ্য নম্বর ৩৩ এর পরিবর্তে ৩১ হওয়া উচিত। মোট নম্বরও ৭৭ এর পরিবর্তে ৭৫ হওয়া উচিত।
অনামিকার দাবি, প্রাথমিকভাবে যে ওয়েটিং লিস্ট প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে ববিতা সরকার ক্রমতালিকায় ২০ নম্বরে ছিলেন এবং অনামিকা ছিলেন ২১ নম্বরে। পরে মন্ত্রী কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর নাম বেআইনিভাবে ১ নম্বরে ঢোকানোর পর, ববিতা ২১ এবং অনামিকা ২২ নম্বরে চলে যান বলে দাবি মামলায়। এই মামলা চলাকালীন অঙ্কিতা অধিকারীর থেকে পাওয়া প্রায় ১৬ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী।