মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে স্কুলে নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগে কর্মচ্যুত নবম-দশমের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গ্রীষ্মের ছুটির মধ্যে স্কুলে ফেরানো হলেও তাঁদের বেতন নিয়ে টানাপড়েন এখন তুঙ্গে। পৌনে চার হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর অনেকে কর্মস্থলে ফিরলেও বেতন পাচ্ছেন না। ফলে জেলায় জেলায় লাগাতার বিক্ষোভ চলছে।
এই অবস্থায় কী করণীয়, তা জানতে স্কুলশিক্ষা কমিশনার ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকদের (ডিআই) একাংশ। ১৫ ও ১৭ মে দু’-দু’বার কমিশনারেটের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও হয় তাঁদের। তাতেও অচলাবস্থা কাটেনি। তবে ডিআই’দের চিঠির প্রেক্ষিতে বিরক্ত বিকাশ ভবন।
কমিশনারেটের তরফে ১৫ মে সব ডিআই’কে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক) জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে কয়েকটি জেলার আধিকারিক বার বার স্কুলশিক্ষা অধিকরণ বিভাগের ব্যাখ্যা চাইছেন। অথচ সরকারি আইন, বিধি এবং নির্দেশিকা মেনে ডিআই’দের হাতেই সমাধানসূত্র রয়েছে। সে জন্যে বার বার ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের (কমিশনার ও পর্ষদ) দৃষ্টি আকর্ষণ অপ্রয়োজনীয়।
বিকাশ ভবনের কর্তারা মনে করাচ্ছেন, হাইকোর্টের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও পর্ষদ যথাক্রমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগের সুপারিশপত্র ও নিয়োগপত্র প্রত্যাহার করেছিল। আবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁদের স্কুলে ফেরানো হয়েছে। ওই সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন প্রদান বা রদ, কোনও কিছুর বিষয়েই এসএসসি বা পর্ষদের ভূমিকা ছিল না। ডিআই’রাই বেতন পোর্টাল বন্ধ করেছিলেন, ফের পোর্টাল চালুও তাঁদেরই দায়িত্ব।
প্রসঙ্গত, নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই-ইডি’র তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে নবম-দশমে শিক্ষক এবং গ্রুপ সি-ডি কর্মীদের একাংশের চাকরি বাতিল করেছিল হাইকোর্ট। সেই রায় আপাতত কার্যকরী করা যাবে না বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশের পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন পোর্টাল (ইন্টিগ্রটেড অনলাইন স্যালারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা আইওএসএমএস) বন্ধ করেছিলেন ডিআই’রা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পোর্টাল খোলার দায়িত্বও যে ডিআই’দের, সেটাই মনে করিয়েছে বিকাশ ভবন। তার পরেও অবশ্য অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকও বিভ্রান্ত। ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে’র দাবি, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনেক স্কুলের প্রধানদেরই পুনর্নিযুক্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের বেতন আপাতত সাবমিট করতে নিষেধ করেছেন।’
স্কুলশিক্ষা অধিকরণ বিভাগের শীর্ষকর্তাদের পাল্টা বক্তব্য, ‘কোনও ডিআই’কেই শিক্ষকদের বেতন বন্ধের কথা বলা হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টের রায় মেনে নিয়োগ-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগপত্র প্রত্যাহার করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, একই ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে পর্ষদ শিক্ষকদের স্কুলে ফেরানোর কথা বলেছে। এখন ডিআই’দেরই বেতন চালু করতে হবে।
ইতিমধ্যে দু’একজন ডিআই পোর্টাল চালুও করেছেন।’ পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানান, স্কুলগুলি শিক্ষক-কর্মীর স্বল্পতায় ভুগছে। এই অবস্থায় দ্রুত নিয়োগ শুরু অথবা আদালতের নির্দেশ মতো কর্মচ্যুতদের ফেরালে স্কুলেরই উপকার।