অভিযুক্ত নাবালিকার পরিজনেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ছাত্রী স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সে অভিভাবকদের স্কুলে পরীক্ষার ফল জানতে যাচ্ছি বলে স্কুটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও ওই নাবালিকা বাড়িতে না ফেরায় উদ্বিগ্ন পরিজনেরা স্কুলে গিয়ে খোঁজ শুরু করেন।
কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে ওই নাবালিকা তার মোবাইল থেকে বাবাকে একটি এসএমএস পাঠায়। তাতে লেখা ছিল, ‘মেয়েকে যদি ফেরত পেতে চান, তাহলে দেড় কোটি টাকা নিয়ে আজ বিকেলে নেপালগঞ্জের মোড়ে আসুন।’ এরপরেই ভয় পেয়ে যান অভিভাবকেরা। তাঁরা বাঁশদ্রোণি থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান।
তদন্তে নামেন বাঁশদ্রোণি থানার পুলিশ। তদন্তকারীরা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর স্কুটি খুঁজে পান মেট্রো রেলের মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশন লাগোয়া রাস্তায়। এরপর ওই স্টেশনের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় দুই নাবালিকা এক যুবকের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করছে। এরপরে নাবালিকার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে জানা যায় তার অবস্থান দমদমে। দমদম স্টেশনে গিয়ে তদন্তাকারীরা খুঁজে পাননি তাদের।
পরে ওই নাবালিকার মোবাইল ফোন ফের ট্র্যাক করে দেখা যায় কৃষ্ণনগর লোকালে চেপে বসেছে তারা। রেলপুলিশের পক্ষ থেকে লাইনের সব কয়টি স্টেশন এবং কৃষ্ণনগর থানাকে কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয় পুরো ঘটনা। এলাকায় নজরদারি শুরু করে কৃষ্ণনগর থানার পুলিশও।
বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নদিয়া পুলিশ, কলকাতা পুলিশকে জানায়, এলাকার একটি নার্সিং হোমের সামনে থেকে দুই নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাঁশদ্রোণির নিখোঁজ নাবালিকার সঙ্গে তাঁর পরিচয় মিলে গিয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পুলিশকে জানায়, সঙ্গে থাকা নাবালিকা তার বোন হয়। কলকাতা পুলিশের কর্তারা দুই নাবালিকাকে কৃষ্ণনগর থনায় বসিয়ে রাখতে বলেন। বিকেলে কলকাতা পুলিশের একটি টিম পাঠনো হয় কৃষ্ণনগর থানায়। রাতে দুই নাবালিকাকে নিয়ে শহরে ফেরে কলকাতা পুলিশের টিম।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নাবালিকা আশানুরূপ নম্বর না পেলেও মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছে। জেরায় সে পুলিশকে জানিয়েছে, তার শঙ্কা ছিল সে পাশ করবে না। ফলে রেজাল্ট জানার পরে অভিভাবকেরা তাকে বকাবকি করবেন।
তাই সে পালিয়ে গিয়ে অপরহণের গল্প ফাঁদতে বাবার কাছে মুক্তিপণও দাবি করে। কলকাতা পুলিশের অপরাধ দমন বিভাগের যুগ্ম কমিশনার শঙ্খশুভ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘বাঁশদ্রোণি স্টেশনে যে যুবককে ওই নাবালিকার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল, তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা তাঁর খোঁজেও তল্লাশি শুরু করেছি। এই কাণ্ডে অনেক ধন্দ রয়েছে। তিনজনকে পাশাপাশি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’