হাতি-মানুষের সংঘাত মেটাতে এবং হাতির যাত্রাপথকে সুগম করতে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে(এনএইচএআই) আন্ডারপাস তৈরির জন্য প্রস্তাব দেয় বন দপ্তর। ইতিমধ্যে, সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া(এনএইচএআই) বনদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে সমীক্ষাও করেছে।
এই আন্ডারপাসটি সাত মিটার উঁচু এবং প্রায় দেড়শো মিটার দীর্ঘ হবে। আন্ডারপাসের নীচ দিয়ে হাতি যাতায়াত করবে এবং উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। যার ফলে ঝাড়গ্রাম ও খড়্গপুর বনবিভাগের মধ্যে হাতির দল সহজেই আন্ডারপাস দিয়ে নিজেদের রুটে যাতায়াত করবে এবং গাড়ি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটবে না।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) অশোকপ্রতাপ সিং বলেন, ‘গুপ্তমণি সংলগ্ন হাতির করিডর এলাকায় জাতীয় সড়কের উপরে আন্ডারপাস তৈরির প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। বন দপ্তর এবং ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া যৌথভাবে সমীক্ষাও করেছে। এই আন্ডারপাস তৈরি হলে হাতি ও মানুষের সংঘাত অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হবে। হাতি ও গাড়ি উভয়েই নিজেদের যাত্রাপথে কোনও বিঘ্ন ছাড়াই সুন্দর ভাবে যাতায়াত করতে পারবে।’
গত কয়েক দশক ধরে বুনো হাতির দল ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দলমা পাহাড় থেকে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলা হয়ে ওডিশার দিকে যায়। আবার একই রুটে ফিরেও আসে। মূলত মেদিনীপুর বনবিভাগের চাঁদড়া থেকে কংসাবতী নদী পেরিয়ে মানিকপাড়ায় ঢুকে খালশিউলি, সরডিহা হয়ে গুপ্তমণি সংলগ্ন এলাকায় জাতীয় সড়ক পারাপার করে হাতির দল।
তারপর খড়্গপুর বনবিভাগের জটিয়া, দুধকুণ্ডি হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে নয়াগ্রাম হয়ে ওডিশায় চলে যায়। আগে বছরে দু’তিনবার হাতি এ পথ দিয়ে যাতায়াত করলেও বর্তমানে প্রতি মাসেই হাতি যাতায়াত করছে এই রুট দিয়ে। যার ফলে জাতীয় সড়ক প্রায়ই দিন ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়ছে। রাস্তার দু’পাশে মালবাহী লরি ও ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ছে। এমনকী, খাবারের সন্ধানে শুঁড় দিয়ে মালবাহী গাড়িতে মাঝে মধ্যে হানাও দিচ্ছে হাতি। রাতে জাতীয় সড়ক পারাপারের সময় দু’পাশের গাড়ির আলোয় অনেক সময় হাতির পাল দিকভ্রান্ত হয়ে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে ‘রং রুটে’ হাতি ঢুকে এলাকায় প্রাণহানি থেকে ক্ষয়ক্ষতিও করছে।
রাতে গাড়ির আলো যাতে আন্ডারপাসের মধ্যে না পড়ে সে জন্য উপরে রাস্তার দু’পাশেই রিফ্লেক্টরও দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এর ফলে হাতির চোখে কোনও আলো পড়বে না। আন্ডারপাস তৈরি করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ ধার্য করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের চূড়ান্ত ছাড়পত্র মিললেই কাজ শুরু হবে।