Calcutta Medical College : জলবসন্ত নিয়েও অস্থিমজ্জার প্রতিস্থাপন, দাদাকে বাঁচাল ভাই – calcutta medical college bone marrow transplantation brother saved life of his elder brother


এই সময়: দাতা ভাইয়ের শরীরে ছিল বসন্তের সংক্রমণ। ভাইরাস ঘায়েল করতে পারতো গ্রহীতা দাদা রক্তরোগীকে। তার পরেও বেনজির চ্যালেঞ্জ নিয়েই সাঙ্গ হলো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মতো জটিল চিকিৎসা। এমন নজির দেশে এই প্রথম। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা। রক্তের মধ্যে থাকা উপাদানগুলোই ঠিকঠাক তৈরি হচ্ছিল না কিশোরের শরীরে। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নামের ওই রোগে আক্রান্ত বছর পনেরোর আসিক ফরহাদ মোল্লার তাই অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করার কথা ভেবেছিলেন মেডিক্যালের চিকিৎসকরা।

Calcutta Medical College : অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে নয়া নজির মেডিক্যালে
ঠিক হয়েছিল, রোগীর ভাই আবির হাসান মোল্লার সুস্থ অস্থিমজ্জা দিয়ে হবে সেই প্রতিস্থাপন। সেইমতো সারা হয়ে গিয়েছিল সব প্রস্তুতি। কিন্তু প্রতিস্থাপনের ঠিক আগেই দাতা ভাইয়ের শরীরে ধরা পড়ে জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের সংক্রমণ। এদিকে গ্রহীতা দাদার অস্থিমজ্জা বিনষ্ট করা হয়ে গিয়েছে। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে সংক্রমণের মধ্যেই প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই, বুঝে যান বিশেষজ্ঞরা।

Heart Surgery: বিনা সূচ-সুতোয় অপারেশন, হার্টের ভালভ প্রতিস্থাপনে যুগান্তকারী প্রযুক্তির ব্যবহার চিকিৎসকের
যদিও মারাত্মক ঝুঁকির কথা ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলেন চিকিৎসকরা। যাঁর অধীনে চলছিল চিকিৎসা, মেডিক্যালের হেমাটোলজি বিভাগের সেই প্রধান চিকিৎসক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য জানান, চূড়ান্ত পদক্ষেপ করার আগে, রক্তরোগ, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন, রক্ত সঞ্চালন, ভাইরোলজি, ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং সংক্রামক রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অন্তত ছ’জন প্রথিতযশা চিকিৎসক মিলে সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসার গতিপথ ও সম্ভাব্য জটিলতা নিয়ে। ঈদের ছুটির দিন আয়োজিত সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন পিজিআই-চণ্ডীগড়ের এক বিশেষজ্ঞও।

ঠিক হয়, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের সাহায্যে মারাত্মক চ্যালেঞ্জটা নেওয়া হবে। সেইমতো ঝুঁকি নিয়েই গোটা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া মেটান মেডিক্যালের অধীন ইনস্টিটিউট অফ হেমাটোলজি অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের (আইএইচটিএম) চিকিৎসকরা। তাঁদের দাবি, এমন সাফল্য দেশে এই প্রথম। একজন সংক্রমিতের শরীর থেকে নেওয়া অস্থিমজ্জা দিয়ে এর আগে এমন সফল প্রতিস্থাপন কারও হয়নি। যদিও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পরেও টানা একমাস চিকিৎসকদের কড়া পর্যবেক্ষণে ছিল আসিক। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সুস্থ হয়ে সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং জীবনতলার বাড়ি ফিরল সোমবার।

বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনে বরাদ্দ কোটি
বছর দেড়েক ভুগছিল আসিক। গত বছরের শেষে মেডিক্যালেই ধরা পড়ে রোগটা। হাসপাতালে ভর্তি থেকে লম্বা চিকিৎসা আর তার শেষে প্রাণদায়ী প্রতিস্থাপনের পর এদিন বিকেলে বাড়ি ফিরেছে সে। এবার সে সামনের বছর মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে মন দিতে চায় বলে জানাচ্ছেন আসিকের বাবা, পেশায় গৃহশিক্ষক আবু বক্কার মোল্লা। তাঁর কথায়, ‘এত বড় চিকিৎসা। অথচ একটা টাকাও খরচ হয়নি। মেডিক্যালের চিকিৎসকরা যা করলেন, তাকে অসাধ্য সাধন বললেও কম বলা হবে। আমার কৃতজ্ঞতার ভাষা নেই। সত্যি বলতে কী, এতটা আশা করিনি।’

অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ফের গ্রিন করিডর কলকাতায়
মেডিক্যালের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেই নয়, প্রশাসনিক দিক থেকেও কাজটা সহজ ছিল না একেবারেই। একে তো প্রতি সপ্তাহে রক্ত আর অণুচক্রিকা নিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছিল আসিককে, তার উপর আবার সংক্রমণ সামাল দিতে মাসে দু’ বার করে তাকে ভর্তিও হতে হচ্ছিল মেডিক্যালে। চিকিৎসকরা চেষ্টা চালাচ্ছিলেন, ঠিকঠাক দাতা পেলে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করবেন। ছোট ভাই আবিরের সঙ্গে তার এইচএলএ (হিউম্যান লিউকোসাইট অ্যান্টিজেন) মিলে যাওয়ায় ঠিক হয়, বছর এগারোর ভাইয়ের থেকেই নেওয়া হবে সুস্থ অস্থিমজ্জা।

যুদ্ধের বলি যৌনাঙ্গ! বিশ্বের প্রথম পেনিস প্রতিস্থাপনে স্বাভাবিক জীবনে জওয়ান!!
সেইমতো প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুতও করা হয়ে গিয়েছিল আসিককে। কিন্তু সেই সন্ধিক্ষণেই আবিরের ধরা পড়ে জলবসন্ত। এ দিকে তখন আর চিকিৎসা স্থগিত করার কোনও উপায় নেই। প্রতিস্থাপন তখনই না করা গেলে আসিকের মৃত্যু অবধারিত। পিছিয়ে আসার কোনও রাস্তা না-পেয়ে নজিরবিহীন ভাবে সংক্রমণকে সঙ্গী করেই এগোনোর কথা ভাবা হয়। কঠিন পরিস্থিতিতে বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মৈত্রেয়ী। সে দিনই আবার ছিল ঈদের ছুটির আগের দিন। তার পর দিন ঈদ এবং তার পর রবিবার। তাই ঈদের ছুটিতেই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকে মৈত্রেয়ীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ সুমিত মিত্র ও রাজীব দে, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রসূন ভট্টাচার্য, ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বিভূতি সাহা, ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় এবং ভার্চুয়ালি পিজিআই-চণ্ডীগড়ের ট্রান্সফিউশ মেডিসিন ও অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ রতিরাম শর্মা। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টি যাতে সুষ্ঠু ভাবে মেটে, সে জন্য সহযোগিতায় খামতি রাখেননি মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস ও রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *