কলকায় সমপ্রেমী বিয়ে
রবিবার মধ্যরাত তখন ১২টা। শহরের ভূতনাথ মন্দিরে চারহাত এক হল মৌসুমী দত্ত এবং মৌমিতা মজুমদারের। হলুদ পাঞ্জাবি এবং টপড় পর মন্দিরে বিয়ে করতে পৌঁছন বছর ১৯-এর মৌমিতা। কনের সাজে লাল বেনারসী পরে তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মৌসুমী। ধুমধাম করে না হলেও মৌসুমীর সিঁথি সিঁদূরে রাঙিয়ে দেন মৌমিতা। মালাবদলও করেন। সমাজের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মা কালীর সামনেই আজীবন একে অপরের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করেন এই সমপ্রেমী যুগল।
জানা গিয়েছে, বনগাঁর বাসিন্দা মৌমিতা মজুমদারের সঙ্গে কয়েকমাস আগেই ইনস্টাগ্রামে আলাপ হয় কলকাতার বছর ২৫-এর মৌসুমী দত্তর। দু’জনের মধ্যে আলাপ ক্রমেই ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হয়। নিয়মিত ফোনে এবং ফেসবুকে কথাবার্তা শুরু হয় তাঁদের। এরপর একদিন হঠাৎ করেই মৌসুমীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন মৌমিতা।
ভালোবাসার টানে আইন কানুন উপেক্ষা
এই সময় ডিজিটালকে মৌমিতা বলেন, “সমাজ কী ভাববে তা ভাবিনি। মৌসুমীকে ভালোবাসতাম আর সেটাই ওকে বলেছিলাম। দু’জনেই এরপর সিদ্ধান্ত নিই বিয়ে করব। তাই আমি কলকাতায় এসেছি। সমপ্রেমী বিয়ে নিয়ে কে কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না। যতদিন বাঁচব মৌসুমীকে বুকে আগলে রাখব।”
মৌসুমী দত্ত বলেন, “ভালোবেসে বিয়ে করেছি আমরা। আইন স্বীকৃতি না দিলেও একসঙ্গেই থাকব। যদি আদালত লিভ ইন রিলেশনকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তবে সমপ্রেমীদের বিয়ের অনুমতি কেন মিলবে না?”
পরিবারের তীব্র আপত্তি
মৌসুমী দত্ত ডিভোর্সি। জানা গিয়েছে, অল্পবয়সে বিয়ে হয়েছিল মৌসুমীর। তাঁর ১১ এবং সাত বছরের দুই সন্তানও রয়েছে। মৌমিতার কথায়, “ওর বর ওকে খুব মারধর করত। ওদের এখন ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে।” মৌসুমী বলেন, “দুই সন্তানের দায়িত্ব আমারই। আমার বাপের বাড়িতে ওরা মানুষ হচ্ছে।”
তবে দুই তরুণীরই পরিবার তাঁদের এই বিবাহ মেনে নেয়নি। ফলে বর্তমানে তাঁরা বাগুইআটির জোরাবাগান এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছেন। পরিবার না মানলেও সামাজিক ছুৎমার্গ এড়িয়ে একে অপরকে ছেড়ে যাবেন না তাঁরা, এমনই সমপ্রেমী যুগলের।