রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে জলাভূমি ভরাট, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কোথাও কোথাও সরকারি কর্মীদের যোগসাজশে জলাভূমির চরিত্র বদলেরও অভিযোগ রয়েছে। এই ধরনের কারবার রুখতে দিন কয়েক আগে রাজ্য মৎস্য দপ্তরের তরফে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, এখন থেকে জলাভূমি ভরাটের কোনও অভিযোগ পেলেই কড়া পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। ভরাটের খবর পেয়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিকরা পদক্ষেপ না করলে তাঁদেরকেই ভবিষ্যতে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। অন্যায় ভাবে কেউ জমির চরিত্র বদল করলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের একটি আদেশের প্রেক্ষিতেই জলাভূমি ভরাট রুখতে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। কোথাও বেআইনি ভাবে জলাজমি ভরাট হচ্ছে কিনা, তাতে নজরদারি বাড়াতে ব্লক এবং জেলা আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের কোনও অভিযোগ পেলেই তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের গোচরে আনবেন। যদি জানা যায়, কোথাও জলাভূমির চরিত্র বদলে দেওয়া হয়েছে, সেই মুহূর্তেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক সময় ব্লক ও জেলা আধিকারিকরা অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নেন না। সেটা আর করা যাবে না। অন্যথায় তাঁদের ঘাড়েই দায় চাপবে।
মৎস্য দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জলাভূমি ভরাটের পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। তার অন্যতম প্রশাসনিক নজরদারির অভাব। অনেক ক্ষেত্রে আবার আইনি জটে জলাভূমি সংরক্ষণের কাজ থমকে যাচ্ছে। ভূমি-রাজস্ব দপ্তরের যে নিজস্ব আইন রয়েছে, তাতে তাদের রেকর্ডে পুকুর বা জলাভূমি হিসাবে নথিভুক্ত থাকলে সেটা আর বোজানো যায় না।
কিন্তু এমন অনেক জলাভূমি বা পুকুর রয়েছে যেগুলি রেকর্ডভুক্ত নয়। সেই ফাঁক গলে এক সময়ে নির্বিচারে জলাভূমি ভরাট হয়েছে। সেটা বন্ধ করতে ১৯৮৪ সালে মৎস্য দপ্তর আইন তৈরি করে। ২০০৮ সালে সেটা কিছুটা সংশোধন করা হয়। সেই আইন অনুসারে, রেকর্ডে পুকুর বা জলাশয় হিসেবে উল্লেখ না থাকলেও কিছুতেই জলাশয় ভরাট করা যাবে না।
সেই আইনকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জমি মাফিয়ারা জলাভূমি ভরাট করে চলেছে। মৎস্য দপ্তরের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, গ্রামের দিকে কোথাও জলাভূমি ভরাট হলে লোকে সাধারণত বিএলআরও অফিসে অভিযোগ জানাতে যান। সেই মতো বিএলআরও অফিসের আধিকারিকরা রেকর্ড খতিয়ে দেখেন। তাতে অনেকটা সময় যায়। রেকর্ডে না থাকলে সেই ফাইল আবার পাঠানো হয় মৎস্য দপ্তরে। পুরো বিষয়টি যাচাই করার পর সব শেষে থানায় এফআইআর করা হয়। জেলাশাসকের অনুমোদনক্রমে মূলত বিডিওরাই এফআইআর করেন। তত দিনে জলাভরাট সম্পূর্ণ হয়ে যায়।