এর পর শুরু হয় মাথায় মারাত্মক চোট পাওয়া সুজিতকে নিয়ে বর্ধমান ও কলকাতার হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ানো। জেলা থেকে রাজ্য রাজধানী, চিকিৎসার জন্য কোথাও ঠাঁই হয়নি তাঁর। শেষে মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হলো ওই যুবকের। মন্তেশ্বরের খাঁদরার বাসিন্দা ওই পরিবারের সদস্যরা জানান, গত শুক্রবার একটি বাড়িতে ছাদ ঢালাইয়ের জন্য রড দিয়ে খাঁচা বাঁধছিলেন সুজিত। বিকেলে কাজ যখন শেষের মুখে, তখনই প্রবল বেগে ঝড় শুরু করে। টাল সামলাতে না পেরে ছাদ থেকে নীচে পড়ে মাথায় মারাত্মক চোট পান তিনি।
মৃত সুজিতের ভাই বিশ্বজিৎ বর্মণ বলেন, ‘সন্ধ্যাতেই আমরা দাদাকে নিয়ে প্রথমে যাই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ইমারজেন্সিতে কয়েকটি পরীক্ষার পর কলকাতার পিজি হাসপাতালে দাদাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়।’ ওই রাতেই পিজিতে পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে কোনও বেড খালি নেই। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘দাদার মুখ দিয়ে তখন রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল।
আমরা তড়িঘড়ি পার্ক সার্কাসের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করি। পাশাপাশি পিজিতে যাতে বেড মেলে, সেই চেষ্টাও করতে থাকি।’ শনিবার বেলা তিনটে নাগাদ পিজিতে বেড রয়েছে বলে তাঁরা খবর পান। কিন্তু নার্সিংহোমের বিল মেটাতে দেরি হয় কিছুটা। বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ যখন পিজিতে গিয়ে পৌঁছই, তখন জানতে পারি সেখানে আর বেড খালি নেই। এরই মাঝে জানতে পারি, বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরো-সায়েন্সেস-এ বেড রয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও ফিরে আসতে হয়। ফের আমরা আসি পিজিতে।’
এবার তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্স চালক জানায়, অক্সিজেনের জন্য ঘণ্টা পিছু হাজার টাকা করে দিতে হবে। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘এসব করতে করতে রবিবার হয়ে যায়। আমরা ঠিক করি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেই ফের দাদাকে নিয়ে যাব। সেই মতো সেখানে পৌঁছে ভর্তি করাতে গেলে ওরা জানায়, পিজিতে রেফার করা রোগীকে ফের ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়।
তখন বর্ধমানেরই নবাবহাটে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করি।’ সেখানে ২৮ হাজার টাকা বিল হয়। কোনওরকমে সেই টাকা জোগাড় করে বিল মেটায় সুজিতের পরিবার। কিন্তু সোমবার তাঁকে বাড়িতেই নিয়ে আসতে বাধ্য হন তাঁরা। তাঁর ভাই বিশ্বজিৎ বলছেন, ‘শুধুমাত্র অক্সিজেন দিয়ে বাড়িতে রাখা ছিল দাদাকে। মঙ্গলবার ভোরে দাদা চলে গেল। বহু চেষ্টা করেও দাদার চিকিৎসা করাতে পারলাম না।’
মৃত সুজিতের পরিবারের আক্ষেপ, শুধু চিকিৎসার চেষ্টা করতেই তাঁদের খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকারও বেশি। এমনকী বর্ধমানের নবাবহাটের নার্সিংহোমের বিল মেটাতে তাঁদের সোনার গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সেও গুণতে হয় মোটা টাকা। শুক্র থেকে মঙ্গল, পাঁচটি দিন পথে পথে ঘুরে দিনমজুরির সামান্য রোজগারের টাকাই শুধু খরচ হলো। মিলল না চিকিৎসা।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় বর্ধমান হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমন হওয়ার কথাই নয়। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশিকার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, হাসপাতালে কোনও রোগী এলে তাকে ফেরানো যাবে না। তার অবস্থা স্টেবল হলে তবেই তাকে রেফার করা যেতে পারে। আমরা সেটাই মেনে চলার চেষ্টা করি। যদি কোনও বিচ্যুতি ঘটে থাকে সেটা দেখা হবে। পরিবারের তরফে লিখিত ভাবে জানালে খতিয়ে দেখব।’