অঞ্জনার মাথায় বিনামেঘে বজ্রপাত হয়েছিল ১৯ মে। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাড়িতে তাঁদের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে খেলতে খেলতে সংজ্ঞা হারান সৌমেন। ব্রেন স্ট্রোকের জেরে সেই যে চেতনা হারিয়েছিলেন তিনি, তা আর ফেরেনি। তাঁর শ্যালক টুপাই দাস জানান, এর পরেই কালনা মহকুমার হাসপাতাল ঘুরে তাঁরা ওই দিনই পৌঁছন অ্যাপোলোয়। ঠিক ছ’ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ব্রেন ডেথ হয়েছে সৌমেনের। সে কথা জেনে অঙ্গদানে সম্মতি দেয় পরিবার। তার পর থেকেই খোঁজ শুরু হয় অঙ্গ গ্রহীতাদের।
শুক্রবার সকালে ঠিক হয়, সৌমেনের মরণোত্তর হৃদযন্ত্র পাবেন আরএন টেগোরে চিকিৎসাধীন এক ২৮ বছরের যুবক। লিভার পেয়েছেন অ্যাপোলোতেই চিকিৎসাধীন ৫৩ বছরের এক প্রৌঢ়। আর একটি কিডনি পেয়েছেন সৌমেনেরই সমবয়সি অ্যাপোলোয় চিকিৎসাধীন এক যুবক এবং দ্বিতীয় কিডিনিটি পেয়েছেন এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন ২৭ বছরের এক কিডনি রোগী। এদিন রাতেই সব ক’টি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার সফল ভাবে শেষ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত সব অঙ্গগ্রহীতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। অঞ্জনার কথায়, ‘যা হারিয়েছি, তা আর কখনও ফিরে পাব না। ওর অঙ্গে নতুন জীবন পাচ্ছে চার জন, সেটাই যা সান্ত্বনা।’
পারিবারিক সূত্রে খবর, সৌমেন একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পদস্থ এগজি়কিউটিভ ছিলেন। রোজকার মতো ১৯ তারিখেও অফিস গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নিয়ে ডিনার সেরে নেন। আচমকা শুরু হয় প্রবল মাথার যন্ত্রণা। তার পরই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান খাট থেকে। বাড়িতে স্ত্রী-পুত্র ছাড়াও রয়েছেন সৌমেনের বাবা মনীন্দ্র ও মা ইতি ভদ্র। কালনার হাসপাতাল থেকে অ্যাপোলোয় আনার পরেই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, ঘোর সঙ্কটজনক পরিস্থিতি। সেই সঙ্কট আর কাটেনি পরে। বরং অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাতে ব্রেন ডেথ হয় সৌমেনের।