স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সংসারের জোয়াল তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। পরিচারিকার কাজ করে পড়িয়েছেন দুই মেয়েকে। মায়ের এই কঠিন লড়াই আজ পূর্ণতা পেয়েছে বড় মেয়ে মাম্পি হেমব্রমের উচ্চ মাধ্যমিকের সাফল্যে। ৪৪১ নম্বর পেয়ে চিত্তরঞ্জন মহিলা সমিতি গার্লস হাই স্কুলের ‘স্টার’ পরীক্ষার্থীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর লক্ষ্য, ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
চিত্তরঞ্জন রেলশহরের বোটিং ক্লাবের কাছে ছোট্ট ১০ ফুট বাই ৮ ফুটের ঘর। উপরে টিনের চাল। পড়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তাতেই বাজিমাত করলেন মাম্পি। তাঁর কথায়, ‘নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে লোকের বাড়ি কাজ করে মা। সকাল ৬টা থেকে ৮টা, তার পর বেলা ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত, আবার বিকেল ৪টে থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাড়িতে কাজ সেরে ঘরে ফেরে।
বোন ছোট। তাই সংসারের সব কাজই আমাকে করতে হয়। রান্নাবান্না, ঘরের কাজ সেরে তার পর পড়তে বসি।’ বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৪, ভূগোলে ৯২, ইতিহাসে ৮৭ এবং দর্শনে ৮৫ নম্বর পাওয়া মাম্পি বলেন, ‘পড়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময় তো ছিল না, তাই যখনই সুযোগ পেয়েছি তখনই পড়তে বসেছি। তবে পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়তে হয়েছে। স্কুলের দিদিমণিদের সবসময় পাশে পেয়েছি। পাশাপাশি শিক্ষক গৌতম স্যার ও অনামিকা ম্যাডাম দু’জনেই খুব সাহায্য করেছেন। এখন চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু কলেজে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করতে চাই।’
বছর তিনেক আগে স্বামী তাঁদের ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। কোনও যোগাযোগ রাখেননি। সেই থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সন্ধ্যা হেমব্রম। বলছিলেন, ‘অনেক কঠিন দিন পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু কখনও দুই মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে আপস করিনি। ওদের বাবা কখনওই চাইত না যে মেয়েরা লেখাপড়া করুক। বই-খাতা ছিড়ে ফেলে দিত।
আমার উপরেও অত্যাচার চালাত। আর সেই সময় থেকেই আমি মনে মনে ঠিক করে মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবই। কারণ, শিক্ষার আলাদা একটা দাম আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই ছোট মেয়ে লক্ষ্মীও তার দিদির মতো পড়াশোনা করে ভালো ফল করুক।’