বয়সের ভারে কার্যত ঝুঁকে পড়েছেন এই প্রবীণ। কিন্তু, তাঁর গলার সুর ও স্বর আজও টনটনে। তিনি কান্দির বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত এক গায়ক। যিনি প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে গান, সুর বিলি করে বেড়ান।
তরুণ বয়সে কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশনে গান শিখেছেন কান্দির বাসিন্দা তরণী। কিন্তু, এরপর সংসারের জোয়াল এসে পড়ে তাঁর কাঁধে। আর্থিক সংকটের জন্য গায়ক হয়ে ওঠার স্বপ্ন কোনওদিন পূরণ হয়নি তরণীর। কিন্তু, শিল্পী কবে স্বীকৃতির লোভ করেছে! দৃষ্টিহীন এই প্রবীণ কাঁধে একটি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েন মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন শহর কান্দির রাস্তায় রাস্তায়।
বর্তমানে মানুষকে গান শোনানোই তাঁর কাজ ৷ বিশেষ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কণ্ঠ ছেড়ে গান করেন তিনি। তাঁর সুরেলা কণ্ঠস্বরে মোহিত হন এলাকাবাসী এবং পথচলতিরা। দৃষ্টিশক্তি গেলেও তা নিজের দুর্বলতা ভাবতে নারাজ ওই প্রবীণ। তিনি জানান, তাঁর গানে খুশি হয়ে মানুষজন অর্থ দেন। আর এই উপার্জনের উপর ভিত্তি করেই ছয় জনের সংসার চালান তিনি।
তাঁর পরিবারে রয়েছেন তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী। পরিবারের অন্যতম ভরসা ৭০ উর্ধ্ব দৃষ্টিহীন তরণী। তাঁর কাঁধেই এই মুহূর্তে রয়েছে সংসারের দায়িত্ব। পথে মানুষকে গান শুনিয়ে পাওয়া অর্থটুকু দিয়েই দিন গুজরান হয় পরিবারের বাকি সদস্যদের।
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি থানার অন্তর্গত জেমো চকপাড়ার বাসিন্দা তরণী ঘোষ। জানা গিয়েছে, জন্ম থেকেই তিনি দৃষ্টিহীন। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে লড়তে হয়েছে তাঁকে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার সময় তিনি জীবনে বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন হিসেবে বেছে নেন গানকেই।
দীর্ঘ প্রায় দশ বছর ধরে তিনি গান গেয়েই সংসার চালাচ্ছেন। ফলে তিনি পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছেন এলাকাবাসীর কাছে। কান্দির পথ চলতি বাসিন্দাদের কাছেও তরণী গায়ক হিসাবেই পরিচিত এই প্রবীণ। আর এই পরিচিতিই তাঁর জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য বলে জানিয়েছেন তরণী। তাঁর কথায়, ভুবন বাদ্যকর, রানু মণ্ডলের মতো ভাইরাল হতে না পারলেও তাঁর জীবনে কোনও আক্ষেপ নেই। কারণ তিনি মানুষের মন জয় করেছেন।