শ্বশুরবাড়ি বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্লভপুরে৷ আর বাবার বাড়ি হরিরামপুর ব্লকের মালিয়ান দিঘি সংলগ্ন এলাকায়। গত রবিবার রাতে ওই গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বালুরঘাট থানার পুলিশ। পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে আনে এবং তা সোমবার ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে খবর পেয়ে বালুরঘাট হাসপাতালে আসেন মৃতার বাপের বাড়ির সদস্যরা৷ পরিবার সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, প্রায় বছর ছয়েক আগে দেখাশোনা করেই খুশি ও সুধীরের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের একটি সাড়ে তিন বছরের মেয়ে রয়েছে। স্বামী সুধীর পেশায় কৃষক। অভিযোগ, বিয়ের বছর দুয়েক পর থেকেই দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।
বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ সহ নানা কারণ অকারণে বচসা লেগেই থাকত৷ কথা না শুনলেই জুটত মার৷ করা হত অকথ্য অত্যাচার৷ স্বামীর পাশাপাশি তার শ্বশুর শাশুড়ি সহ অন্যান্য আত্মীয়রাও মারধর করত বলেই অভিযোগ করেছে খুশির পরিবার৷ এমনকি যিনি বিয়ের ঘটক ছিলেন তিনিও নাকি ওই গৃহবধূকে মারধর করতেন।
এই সব কারণে মাস ছয়েক আগেও একবার গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল খুশি। তবে সেবার পরিবারের নজরে আসায় তা আটকানো সম্ভব হয়েছিল। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি। এদিকে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে স্বামী সুধীর চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ এই নিয়ে সোমবার বালুরঘাট থানায় মৃতার বাপের বাড়ির তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷
স্বামী সহ মোট সাতজনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ এদিকে বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই বিষয়ে মৃতার দাদা পঙ্কজ মণ্ডল বলেন, “আমার বোনকে জামাই বাদেও তার শ্বশুর শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়রা মারধর করত। মাস ছয়েক আগে আমরা বোনকে বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলাম।
পরে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সালিশি সভা বসিয়ে বোনকে বাড়ি নিয়ে যায়৷ এরপর কাল পার্শ্ববর্তী এলাকার কাছে খবর পাই খুশি আত্মঘাতী হয়েছে। আমাদের বোনকে খুন করা হয়েছে। আর বোন যদি আত্মহত্যা করেও তাহলে তাকে তা করতে বাধ্য করা হয়েছে”। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পঙ্কজবাবু।
এই বিষয়ে মৃতার প্রতিবেশী তোফাজল হোসেন বলেন, “ওই মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে। কারণ বিয়ের পর থেকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। না আনলেই চলত অত্যাচার।
বিয়ের দু’বছর পর থেকেই এই অত্যাচারের পরিমান বেড়ে গিয়েছিল”। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে এই বিষয়ে বালুরঘাট থানার IC শান্তিনাথ পাঁজা জানান, “এই নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি৷ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে”।