খুন হওয়া লোকটির চারপাশটা মন দিয়ে দেখছিলেন শার্লক হোমস। নিচু হয়ে কিছুটা ছাই কুড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলেন, ‘যে খুন করেছে সে চুরুট খায়। ত্রিচিনপল্লি চুরুট।’ যে ভাবে অপরাধী ধরার কৌশল অবলম্বন করেছিলেন শার্লক হোমস, এ বার অনেকটা তেমন পদ্ধতিতে মানুষ-হাতি সংঘাত কমানোর পরিকল্পনা উত্তরবঙ্গে। হাতির মল বিশ্লেষণ করে মিলবে গজরাজের পছন্দের খাবার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা। এবং সে পথেই কমবে সংঘাত।
একদিকে নেপালের মেচি নদী, অন্যদিকে তিস্তা। মাঝখানে ১০০ কিলোমিটার জুড়ে মহানন্দা, কার্শিয়াংয়ের সমতল অংশ এবং বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে বিচরণ করা হাতিদের লোকালয়ে ঢুকে পড়া আটকাতে উদ্যোগী পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা ‘নেচার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি’ (নিউজ)।
জঙ্গলের হাতির পাল গ্রামে ঢুকলে বাধে সংঘর্ষ। কখনও হাতির হামলায় মানুষের মৃত্যু, কখনও পাল্টা আক্রমণে গুরুতর জখম হয় হাতি। নিউজের কর্ণধার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘হাতিরা যাযাবর। প্রধানত খাবারের খোঁজেই জঙ্গলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। গ্রামেও ঢোকে খাবারের জন্যই।’ তাঁর বক্তব্য, ‘কোন খাবার হাতি বেশি পছন্দ করছে, সে সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।
মহানন্দা, জলদাপাড়া এবং বক্সা – এই তিন জঙ্গলে হাতিদের মল সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করব আমরা। দেখা হবে, হাতিরা কি কোনও বিশেষ ফল খেয়েছে? নাকি পেটে গিয়েছে ঘাস? গ্রামে ঢুকে কোন শস্য খেয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে জঙ্গলে তার গাছ বেশি করে বসানোর চেষ্টা হবে। তা হলে ওরা হয়তো বেরোবে না।’ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য বন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়েই এই পরিকল্পনা। এই উদ্যোগে প্রধান আর্থিক সহায়তা জার্মান সংগঠন ‘এনডব্লিউএ ফাউন্ডেশন’-এর।
নিউজের অন্যতম ফিল্ড বায়োলজিস্ট রঞ্জনা সাহা বলেন, ‘নির্দিষ্ট হাতির দল বেছে প্রতি ১০০ মিটার দূরত্বে তাদের মল সংগ্রহ করা হবে। তারা গ্রামে ঢুকলেও সংগ্রহ করা হবে মল। তা বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে, গ্রামে কোন ধরনের খাবার ওদের বেশি পছন্দ।’ ওই অঞ্চলে সংস্থার সদস্য অণুজিৎ বসু মানুষ-হাতি সংঘাত রুখতে সক্রিয়। বটানিস্ট সৈকত মান্নাও এ কাজে যুক্ত।
২৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে হাতিদের গতিবিধি সম্পর্কে মানুষকে আগাম সতর্ক করতে ‘এইচইসি কুইক অ্যালার্ট’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করেছে নিউজ। হাতিদের চলার পথ সম্পর্কে বিশদে জানতে রেডিয়ো কলার পরানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। জঙ্গলের তিনটি ডিভিশনের ১৪টি রেঞ্জের বনকর্মীদের নিয়ে নিউজ মোট সাতটি ওয়ার্কশপ করেছে।