জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ওড়িশায় বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত শালিমার- চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস! কোনওমতে রক্ষা পেয়েছে ৩ বগি! আহত বহু যাত্রী। দুর্ঘটনা ঘটেছে পানপানা-বাহানাগা স্টেশনের মাঝে। বালেশ্বরের পথে রাজ্যের প্রতিনিধি দল। ইতিমধ্যেই হাওড়া থেকে বাতিল হয়েছে একাধিক দুরপাল্লার ট্রেন। এই ঘটনায় বিপাকে যাত্রীরা।
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ‘প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ আহতদের চিকিৎসা করা’। বিরোধীদের আক্রমণের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি অনুরধ করব প্রথমেই আগে আহতদের চিকিৎসা করা হোক’। তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত রিস্টোরেশনের কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই যত মেশিন রয়েছে সেইগুলি কাজ শুরু করেছে। এনকোয়ারির জানা যাবে কী হয়েছিল’।
দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ। কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ। ভয়ংকর রেল দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিল তাঁদের।
কাকদ্বীপ
পরিবারের একমাত্র রোজগেড়ে ছিলেন কাকদ্বীপের মধুসূদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন নম্বর এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন। শুক্রবার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ কেড়ে নেয় তার। মূলত প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকার কাকদ্বীপ নামখানা পাথরপ্রতিমা সহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকেরা ভিন রাজ্যে যায় কাজের উদ্দেশ্যে। কাকদ্বীপের মধুসূদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সাত আট জনের একটি দল ভিন রাজ্যে যাচ্ছিল সেই কাজের উদ্দেশ্যেই। হঠাৎই বালেশ্বরে এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নেয় পরিবারের একমাত্র রোজগের মহিউদ্দিন শেখের। পরিবার সূত্রে জানা যায় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন বারে বারে ফোন করতে থাকে মহিউদ্দিন সহ অন্যান্যদের। পরবর্তী সময়ে তাদের কাছে ফোন আসে মহিউদ্দিনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে।
মঙ্গলকোট
করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মঙ্গলকোটের কুরুমব গ্রামের ইয়াদ আলী শেখের এখনও কোনও খবর পাওয়া যায়নি। দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে পরিবার।
করমন্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় কাটোয়া মহুকুমার মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত কুরুমব গ্রামের দুই ব্যক্তি আহমোদ আলী শেখ ও ইয়াদ আলী শেখ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনা কবলিত আহমোদ আলী শেখ গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে ইয়াদ আলী শেখের এখনও কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: Bengal Weather: জেলায় জেলায় ফের তাপপ্রবাহের আশঙ্কা, বইবে ‘লু’! কতদিন পর্যন্ত চলবে এই দাপট?
চন্দ্রকোনা
পরিযায়ী শ্রমিক, তাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার রাইলা গ্রাম থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল কাজের জন্য। তারপরে হঠাৎ শুক্রবার সন্ধে নাগাদ হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে ট্রেন। তাদের দাবি তারা যে ট্রেনের কামরাটিতে ছিল সেটি উল্টে পড়ে, তাই তারা ছিটকে পড়ে কয়েকজন। আহত হয়ে এলাকার মানুষের সহযোগিতায় বাড়ি ফিরলেও, চোখে মুখে আতঙ্কের ছায়া। একই পরিবারের চার সদস্য ছিল এস৫ ট্রেনের কামরায়। চোখের সামনে দেখা ভয়াবহ ঘটনার ছাপ চোখে মুখে স্পষ্ট চন্দ্রকোনার রাইলা গ্রামের এই চার যুবকের। সকালে এই চার যুবকের সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন চন্দ্রকোনা বিধানসভার বিধায়ক অরুপ ধাড়া। কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে।
৫৫ বছরের বিজয় মন্ডলের বাড়ি চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড। কটকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন তিনি। যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য। চন্দ্রকোনার বোনা এলাকার এই ব্যক্তির কোনও খোঁজ এখনও পাচ্ছে না বাড়ির লোকজন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ফোন বন্ধ। সঙ্গে আরও একজন ছিলেন আত্মীয় ছিলেন। তাঁর সঙ্গে পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বিজয় মন্ডলের সম্পর্কে কিছু খোঁজ তিনি দিতে পারছেনা বলে জানা গিয়েছে।
বাঁকুড়া
শুক্রবারের ট্রেন দুর্ঘটনায় জেলায় আহত এক মহিলা সহ ৬ জন। এই করমন্ডল এক্সপ্রেস ধরে কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছিল বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার হামিরহাটি পাঠজোড়া গ্রামের সুজন বাউরি ও বিদ্যুৎ পাল। দুর্ঘটনা জেরে গুরুতর আহত হয় ওই যুবক।
বীরভূম
করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাইয়ে শ্রমিকের কাজে যাচ্ছিলেন বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার বাতাসপুরের ৮ জন বাসিন্দা। তারা সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন।
মালদহ
তপন থানার রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গারামপুর গ্রামের চন্দন রায় ও তার আত্মীয় নিত্যন রায় মালদহের বামনগোলার বাসীন্দা। বৃহস্পতিবার তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন কেরালার উদ্দেশ্যে। ওখানে তাঁরা ঠিক শ্রমিকের কাজ করে। শালিমার এক্সপ্রেসের রওনা দেওয়ার পর বাড়ির সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ হয়েছিল সন্ধ্যা ছয়টা তারপর থেকে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যায়নি আশঙ্কায় রয়েছে পরিবার। করমন্ডল এক্সপ্রেস এর ঘটনার পর তার আত্মীয় নিত্যন রায়ের ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সেখানে কোনও একজন ফোন তুলে বলে মৃত্যু হয়েছে একজনের কিন্তু চন্দন রায়ের কোনও খবর এখনও পাওয়া যায়নি।
করমন্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় মৃত মালদা জেলার মালতিপুরের ধানগাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিয়াঘাট পূর্বপাড়ার বাসিন্দা বছর ২৩-এর মাশরেকুল। চেন্নাইয়ে কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন সে। গতকাল রাতে দুর্ঘটনার খবর জানাজানি হতেই পরিবারের লোকের উৎকণ্ঠা শুরু হয়। ভোর নাগাদ মাশরেকুলের মৃত্যুর খবর আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। শোকের ছায়া এলাকায়। বাড়িতে রয়েছে বাবা, মা, স্ত্রী এবং বছর ছয়ের ছেলে ও ১২ মাসের মেয়ে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন মাশরেকুল।
বাসন্তী
বালেশ্বর হসপিটালে এক নার্সের ফনে থেকে দাদা জানতে পারেন ভাইয়ের চিকিৎসা চলছে, অবস্থা আশঙ্কাজানক। পাশাপাশি আরেক ভাইয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রভাস বৈদ্য। এমনই ফোন আসার পর সকালে বাসন্তী চুনখালী থেকে রওনা দেয় দাদা সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দাদা।
নামখানা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ও কাকদ্বীপ এলাকা থেকে ২১ জনের মতন গুরুতর জখম হয় রেল দুর্ঘটনায়। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
পিংলা
উড়িষ্যার ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার পিন্ডরুই অঞ্চলের চকচন্ডী এলাকার দুই বাসিন্দা। পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চল থেকে মোট ১১ জন যাত্রী করমন্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন। দুর্ঘটনার পর সামান্য আহত হয়েছেন অলোক দাং ও নিতাই দলোই। অন্যদিকে বেলদা থানা পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলদা এলাকার পাহাড়িচক ললাট এলাকা থেকে তাপস মাইতি ও সঞ্জয় জানা নামে দুই যাত্রী ওই ট্রেনে ছিলেন। এখনও পর্যন্ত তাদের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।