গোটা বিশ্বে প্রচুর মানুষ এখনও চোখে দেখতে পান না। দিন দিন সংখ্যাটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ আমাদের যাঁদের চোখে কোনও সমস্যা নেই, তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এলেই এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব। সামান্য উদ্যোগী হলেই অনেকের জীবনে নেমে আসা অন্ধকার ঘুচিয়ে ফেলা সম্ভব। মৃত্যুর পর আমাদের চোখ থেকে যদি অন্য কেউ দৃষ্টি পায়, তবে এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে। অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা, মৃত্যুর পর চোখ নিয়ে নিলে মুখের চেহারা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু, মৃতের চোখ নেওয়া হয় না। নেওয়া হয় কর্নিয়া।
মরণোত্তর চক্ষুদানকে বাহবা দেন প্রশান্ত। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই বাসিন্দা কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কর্নিয়া সন্ধানে ঘুরে বেড়ান। কারও মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেলে ছুটে যান প্রশান্তবাবু। কেউ তাঁর কথা শোনেন, আবার কেউ শোনেন না। তমলুকে ঠিক এমনটাই ঘটল।
তমলুকের নীলকুন্ঠা গ্রামে সত্যবালা জানার (৬৮) মৃত্যু হয়। সেই খবর পেয়ে সটান বাড়িতে চলে যান প্রশান্তবাবু। পরিবারের সদস্য অর্থাৎ মৃতের দুই ছেলে নবদ্বীপ ও চুড়ামণির সঙ্গে কথা বলেন। ছেলেদের সম্মতি পাওয়ার পর নিয়ম মেনে হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন নেত্র নিরাময় নিকেতনের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় মৃত সত্যবালাদেবীর চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করে তিনি।
মৃতের দুই ছেলে নবদ্বীপ ও চুড়ামণি বলেন, ‘মায়ের দুটি চক্ষু দিয়ে অপর দুজন দৃষ্টি ফিরে পাবে আটাই আমাদের ভালো লেগেছে। আমাদের মৃত্যুর পর যাতে চক্ষু সংগ্রহ করা হয় তার আবেদন করেছি। আমরা এগিয়ে এলেই তবেই অনেকেই সুন্দর পৃথিবী দেখার সুযোগ পাবে।’
প্রশান্ত সামন্ত বলেন, ‘এখনও অনেকের মনে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে মৃত্যুর পর চক্ষুদান করলে পরবর্তী প্রজন্ম অন্ধ হয়ে জন্মাবে। সেই ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে অভিজ্ঞ মানুষদের এগিয়ে এসে বোঝানোর আহ্বান জানাই। যে কোনও মানুষ চক্ষুদান করতে পারেন। কোনও সমস্যা নেই। যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হাঁপানি থাকে তারাও চক্ষুদান করতে পারবেন। এইডস, হেপাটাইটিস বি বা সি, জলাতঙ্ক, টিটেনাস, ম্যালেরিয়ার মত অন্ত্রের সংক্রমণ যাঁদের আছে তাঁরা শুধু চোখ দান করতে পারবেন না। যে কোনও আই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই মরনোত্তর চক্ষুদান সম্ভব।’