কর্মভূমিতে বসে জন্মভূমি মণিপুরের জন্য উদ্বিগ্ন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক কে সুনীতা দেবী। ঘনঘন ফোনে কথা বলছেন পরিজনদের সঙ্গে। অন্য দিকে, গরমের ছুটিতে মণিপুরের বাড়িতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বিশ্বভারতীর মণিপুরী নৃত্যবিভাগের অধ্যাপক ওয়াইকুম হেমন্ত কুমার। তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরতে পারছেন না পরিজনদের ছেড়ে। বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের দুই অধ্যাপকের আদিনিবাস মণিপুর। কর্মসূত্রে শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা তাঁরা।
বিশ্বভারতীর মণিপুরী নৃত্যবিভাগের অধ্যাপক কে সুনীতাদেবীও। মণিপুরের ইম্ফলে বাড়ি তাঁর। বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনার সূত্রে থাকেন শান্তিনিকেতনে। জন্মভূমির পরিস্থিতির কথা শুনে প্রতিনিয়ত তিনি পরিজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন৷ বন্ধু-বান্ধব, ছাত্রীরাও বারবার তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন ফোনে। সেই অভিজ্ঞতার কথাই ভাগ করে নিচ্ছিলেন তিনি।
কে সুমিতা দেবী বলেন, ‘প্রতিদিন ফায়ারিং চলছে বলে বাড়ির লোক বলছে। পুলিশের কাছে থ্রি নট থ্রি বন্দুক আর কুকিদের কাছে এ কে ৪৭, মেশিনগান, বোমা। তাই পুলিশ কিছুই করতে পারছে না৷ কুকি ছাড়াও আমাদের ওই এলাকায় ২০টির বেশি আদিবাসী গ্রুপ আছে৷ তাঁদের নেতাদের ধরে ধরে হয় দলে নিচ্ছে, না হয় সরে যেতে বলছে। খুব চিন্তায় আছি। প্রতি মুহূর্তে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে।’
সেখানে খাবার-দাবার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে জেনে তাঁর মুখেও খাবার রোচছে না। তিনি বলেন, ‘আসলে গ্রাম থেকে শহরে সবজি আসে৷ সে সব আসতে পারছে না৷ কেউ ঠিকমতো খেতে পাচ্ছে না। পাহাড়ের গ্রামগুলোর পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। পাড়ার ক্লাবগুলো থেকে ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে খাবার বিলি করা হচ্ছে।’
তবে অন্য একটি উদ্বেগের কথা জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘কুকি গোষ্ঠীর নাম করে অন্যরাও ঢুকেছে বলে মনে হচ্ছে। সবার কাছে শুনছি, ওরা আসলে কুকি নয়৷ কারণ ওরা মণিপুরী ভাষা বলতে পারছে না৷ শুনছি বার্মা (মায়ানমার) থেকে ঢুকে পড়ছে অনেকেই। কতজন মারা গেল। সব খবর ঠিক মতো পাচ্ছি না বলে খুব চিন্তায় আছি।’
ওয়াইকুম হেমন্তকুমার আবার গরমের ছুটিতে মণিপুরে নিজের বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পৌঁছনোর পর থেকেই উত্তপ্ত মণিপুর। ইম্ফল থেকে ফোনে তিনি জানালেন সেখানকার পরিস্থিতি। এমন অবস্থা যে আত্মীয়-পরিজনদের ফেলে রেখে শান্তিনিকেতনে ফিরতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘গরমের ছুটি পড়তেই মণিপুরে এসেছি। কিন্তু আসার পর থেকেই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে। সম্পূর্ণ কার্ফু জারি আছে এখানে৷ পরিস্থিতি ভালো নয়। লাগাতার সংঘর্ষ চলছে। বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছি না৷ আত্মীয়-পরিজনদের ফেলে রেখে শান্তিনিকেতনে ফিরতেও পারছি না।’