চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। আর বালেশ্বর দুর্ঘটনা শিক্ষা নিয়ে বাড়ল রেলের তৎপরতা। শুক্রবার রাতে ওডিশার বালেশ্বরের কাছে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ডাউন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এবং একটি মালগাড়ির সমন্বয়ে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির (সিআরএস) সাউথ-ইস্টার্ন সার্কলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অনন্ত মধুকর চৌধুরির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছে। তার আগে প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসছে, সিগন্যাল-পয়েন্ট সমন্বয়ের অভাবেই এত বড় বিপর্যয়।
এরমধ্যেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরে ভারতীয় রেলের প্রতিটা জোনের চিফ সিগন্যাল এবং টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার (সিএসটিই) এবং তাঁর অধীনস্থ ডিভিশনাল সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারদের (ডিএসটিই) কাছে সতর্কবার্তা এসেছে ‘উপরমহল’ থেকে। হোয়াটসঅ্যাপ করে ডিএসটিই এবং সিএসটিইদের জানানো হয়েছে, ১ জুনের এই দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে রেল নিশ্চিত না হলেও কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর মধ্যে রয়েছে, পয়েন্টের স্বাস্থ্য। রেলের ট্র্যাকে যেখানে একাধিক লাইন মেশে, সেই জায়গাই রেলের পরিভাষায় হলো পয়েন্ট। এছাড়াও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে বৈদ্যুতিন ও বৈদ্যুতিক যোগাযোগ রক্ষাকারী কেবলের অবস্থা নিয়েও। প্যানেল থেকে বৈদ্যুতিক নির্দেশ পাওয়ার পর পয়েন্ট ও সিগন্যাল যথাযথ কাজ করছে কি না, তা নিয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়েও সংশয় রয়েছে।
কোন কোন যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ রাখা যাবে না — সেই বিষয়ে সিগন্যাল ও টেলিকম বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের সতর্ক করার পাশাপাশি রেলের কর্তারা তাঁদের জন্য একটি ‘টু ডু’ বা ‘অবশ্য পালনীয়’ তালিকাও পাঠিয়েছেন।
এই তালিকা অনুযায়ী প্যানেল থেকে পাঠানো বৈদ্যুতিক নির্দেশে পয়েন্ট ও সিগন্যালের প্রতিটি পরিবর্তনের (ডিসকানেকশন ও রিকানেকশন) মেমো সযত্নে রাখতে হবে। রেল কেবিনের প্রতিটা প্যানেলের বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন যোগাযোগ যথাযথ কি না, সেই বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত থাকতে হবে। রেলের বিভিন্ন যান্ত্রিক তথ্য যে ডেটা লগার যন্ত্রে রেকর্ড রাখা হয়, সেই যন্ত্রের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অতি অবশ্যই করতে হবে। যন্ত্রে যে বৈদ্যুতিন রেকর্ড জমা হয়, তার সামান্যতম ত্রুটি-বিচ্যুতিও নজর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
রেলকর্তাদের থেকে আসা এমন নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব রেলের কর্মীদের সংগঠন ইস্টার্ন রেলওয়েমেনস ইউনিয়নের (ইআরমইউ) তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠন জানাচ্ছে, দুর্ঘটনার ৩০ ঘণ্টার মধ্যেই এমন নির্দেশ পাঠিয়ে কর্তারা বুঝিয়ে দিলেন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিপর্যয় এবং তার পর বহু মানুষের প্রাণহানি না হলে কর্তাদের টনক নড়ে না বলে অভিযোগ করছে ইআরএমিউ।