প্রসেনজিত্ সরদার:বাসন্তীর একই পরিবারের ৩ ভাইকে কেড়ে নিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়ংকর দুর্ঘটনা। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারেছেন না স্বামীহারা গৃহবধূরা। কে কাকে সান্তনা দেবেন তাও বুঝে উঠতে পারেছেন না গায়েন পরিবারের লোকজন। বাসীন্তর ছড়ানেখালি গ্রামের হারান গায়েন, নিশিকান্ত গায়েন ও দিবাকর গায়েন ধানো রোয়ার কাজ করতে অন্ধ্রপ্রদেশ যাচ্ছিলেন। বাড়ির লোকজন ভিন্ রাজ্য যেতে দিতে চাইছিল না। কিনাতু তাদের হারানরা বুঝিয়েছিলেন, অনেক দেন। সংসারটা বাঁচবে কী করে! আর দুটো বছর যাবে। তাহলেই সমস্যা কেটে যাবে। সেই শেষ কথা। আর ফেরা হলা না তিন ভাইয়ের।
আরও পড়ুন-দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে কী হয়েছিল, কী বললেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক
গত শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেসে মালাগাড়িকে ধাক্কা দেওয়ার পর ঝড়ের গতিতে খবর ছড়িয়ে পড়ে সংবাদমাধ্যমে। হারান গায়েনের বড়ছেলে ফোন দেখে বলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা হয়েছে। দুই কাকাকে দেখাচ্ছে। খবর শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা পারিবার। পরে জানতে পারেন হারানবাবুও মারা গিয়েছেন। চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে ছোটবড় সবার।
সুভদ্রা গায়েনে ছোট ছেলের স্ত্রী। বারবার বারণ করেছিল তার স্বামীকে কাজে না যেতে। কিন্তু তার স্বামী বলেছিল তোর তো শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। অনেক টাকার ওষুধ লাগে। অনেক দেনা হয়ে গেছে। সংসারটা তো বাঁচাতে হবে। তাই দাদারাও যাচ্ছে, আমিও যাই। আমরা ৩ ভাই একসাথে কাজ করে এক মাস পর ফিরে আসব। মাথার ওপরে এখনও মা আছে। ওখান থেকে ফিরে এলে দেখবি, সংসারটা আরও ভালোভাবে চলবে। আমরা যাচ্ছি তা কী হয়েছে? মা তো আছে। তোমাদের সবাইকে দেখবে।
তিন ছেলে মাকেও বলে গেছিল মা বৌমা নাতি-নাতনিদেরকে দেখো। আমরা এক মাসের জন্য যাচ্ছি। আবার চলে আসব। তাও সুভদ্রা বলেছিলেন, আমার ছোট ছোট বাচ্চা। তুমি কাজে যেও না। তোমায় ছেড়ে থাকতে পারব না। কিন্তু কোন ছেলে কারো স্ত্রীর কথা শোনেনি। প্রত্যেকেই বলেছিল একমাস কাজে থেকে ঘুরে আসি। সংসারটা ভালোভাবে চলবে। আর ফেরা হলো না। চুরমার হয়ে গেল সাজানো সংসার । সরকারি ভাবে কিছু আর্থিক সাহায্য হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু অর্থের তাগিদে ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আর তো ফেরা হলো না পরিবারে। ইতিমধ্যে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়াশোনা দায়িত্ব রাজ্যপাল থেকে রাজনৈতিক নেতারা নেওয়ায় কথা জানিয়েছেন।কিন্তু শেষপর্যন্ত কী হবে ভেবে পাচ্ছে না গোটা পরিবার।
উল্লেখ্য, গতকালই কটকে গিয়ে বাংলার আহতদের দেখে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত ও আহতদের আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। যারা পরিবারের রোজগেরে মানুষকে হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার কটকের এসপিডি হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আহতদের দেখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর ওড়িশা সরকার যেভাবে কাজ করেছে তার জন্য ওড়িশা সরকারকে ধন্যবাদ। ইতিমদ্য়েই ওড়িশা সরকারকে একশো অ্যাম্বুল্য়ান্স দিয়ে সাহায্য করেছি। ডাক্তার, নার্সও পাঠানো হয়েছে। এখনওপর্যন্ত বাংলার ৫৭ জন মারা গিয়েছেন। ৯১ জন চিকিত্সাধীন। ৩১ জনের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আহতদের কারও হাত, কারও পা কেটে গিয়েছে। তাদের পরিবারের লোকজনকে চাকরি দেব। যারা মারা গিয়েছেন তাদের ৫ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে কী বলবেন? সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তরে মমতা বলেন, নো কমেন্টস। আমি চাই সত্যিটা বেরিয়ে আসুক। সত্যিটা যেন চেপে দেওয়া না হয়। এত মানুষের মৃত্যু হল। এখন তর্কবিতর্ক করার সময় নয়। তাই সত্যি প্রকাশ পাওয়া প্রয়োজন। অনেকে বলছেন পরিযায়ী শ্রমিক। এরাও আমাদের অর্থনীতির জন্য কাজ করেন। বিহার থেকে মানুষ ওড়িশায় মানুষ যায়, ওড়িশা থেকে মানুষ রাজস্থান যায়। রাজস্থান থেকে বাংলায় আসে। অনেকে দক্ষিণের রাজ্যে যায়। অনেকে আবার দুবাই, আমেরিকাও যায়। পরিযায়ী শ্রমিক বলে কাউকে অসম্মান করা উচিত নয়।