পিয়ালি মিত্র: বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতদের সংখ্যা বেড়েছে৷ পাশাপাশি বেড়েছে দেহ শনাক্তের সমস্যা এবং ক্ষতিপূরণ নিয়েও টানাটানি। রেল এবং রাজ্যে সরকারি আধিকারিকরা জানান, ক্ষতিপূরণ টাকা পেতে একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। প্রসঙ্গত, রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য রেল মন্ত্রক ঘোষণা করেছে ১০ লক্ষ টাকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করেছে ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা।
আরও পড়ুন, Ration: মৃতের কার্ডে রেশন তুলে বাজারে বিক্রি! হাইকোর্টের কড়া ভর্ৎসনার মুখে রাজ্য
সব মিলিয়ে এরাজ্যে বাসিন্দা একজন মৃতের পরিবারের পাওয়ার কথা ১৭ লক্ষ টাকা। একই পরিবারের দুজন যদি প্রাণ হারিয়ে থাকেন সেই অঙ্ক দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৩৪ লক্ষ টাকা। টাকার অঙ্কে নেহাতই কম নয়। সম্ভবত সেই কারণেই মৃতের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা কে নেবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। সূত্রের খবর, ভুবনেশ্বর হাসপাতালে মর্গ থাকা দেহ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত বাংলা অফিসাররা এমনই অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন বহু ক্ষেত্রে। কোনও সময় একই দেহের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিদার মা-ছেলে। কখনও আবার এক ছেলে এসে বাবার দেহ শনাক্ত করে যাওয়ার পরেও আরেক ছেলে এসেও দাবি করে ক্ষতিপূরণের৷
ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে। যেমন, গোসাবার যে ব্যক্তির সশস্ত্রীক মৃত্যু হয়েছে সেই ৩৪ লক্ষ( দু’জন মৃত বাবদ) টাকা একদিকে দাবিদার ছেলে, অন্যদিকে মৃতের বিধবা “মা”। ফলে ক্ষতিপূরণ টাকা কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে সমস্যা পড়ে প্রশাসনের। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে অবশ্য ছেলেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ যে মহিলা মৃত ব্যক্তির মা বলে জানিয়েছিলেন, তিনি মৃতের মা নয় জেঠিমা বলে জানা যায়।
করমন্ডল দুর্ঘটনায় মৃতদের ১৮৯ জনের দেহ আনা হয়েছিল ভুবনেশ্বরে। তার মধ্যে ১১০ জনের দেহ শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা ।বর্তমানে ৮৩টি অশনাক্ত দেহ AIMS হাসপাতালে। সেখানে ডিসপ্লে স্ক্রিনে ছবি দেখে দেহ শনাক্ত করতে পারলে হেল্প ডেস্ক থেকে একটি টোকেন ইস্যু করা হয়। সেই টোকেন নিয়ে মৃতের পরিবার সদস্যদের মুখামুখি হতে হয় রেল, ভুবনেশ্বর পুরসভা সহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থাকে নিয়ে গঠিত কমিটির।
সেখান থেকে একটি স্লিপ ইস্যু করা হয়। এরপর মর্গে গিয়ে শ্বশরীরে দেহ শনাক্ত করতে হয়। শরীরের কোনো চিহ্ন, ট্যাটু, আংটি বা অন্য কিছু দেখে শনাক্ত করতে পারলে মর্গ থেকে কী দেখে দেহ শনাক্ত করা হল সেই সংক্রান্ত একটি স্লিপ ইস্যু করা হয়। তারপর সেই শ্লিপ দেখে কমিটি যাবতীয় নথি খতিয়ে দেখে চেক ইস্যু করে। এবং দেহ হস্তান্তর হয়। রেলের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকার চেক হাতে হাতে ইস্যু করা হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
রাজ্য প্রশাসেন একাংশের বক্তব্য, করোমন্ডলের দুর্ঘটনা ভয়াবহ স্মৃতি এখনো দগদগে গোটা দেশবাসীর মনে। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা থেকে আপনজনের মৃত্য শোক ভুলে যে ভাবে ক্ষতিপূরণ পেতে একই পরিবারের সদস্যরা “লড়াই” এ সামিল হয়েছেন তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন, Fish Price: মাছের দাম ছ্যাঁকা দিচ্ছে মধ্যবিত্তের পকেটে! রেল দুর্ঘটনাই মূল কারণ?
