জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রবিবার ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়া নিয়ে তুলকালাম হয়ে ওঠে ঠাকুরবাড়ি। তাঁকে মূল মন্দিরে ঢুকে দেওয়া হয়নি। মন্দিরে শান্তনু ঠাকুরের অনুগামীরা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের। পাশাপাশি, রাজ্যের এক বিজেপি নেত্রীর কথার রেশ ধরে মন্ত্রী শশী পাঁজার অভিযোগ, ব্রাহ্মণ বলে অভিষেককে মন্দিরে ঢুকে দেওয়া হয়নি। এতে আমাদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে।
আরও পড়ুন- ‘এটাই ওর শেষ পদযাত্রা হয়ে যাবে’, অভিষেককে পাল্টা শান্তনুর..
সোমবার তৃণমূলের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, গতকাল ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন পুজো দিতে। তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল হাবরায়। ঠাকুরবাড়িতে তিনি পুজো দিতে গিয়েছিলেন কারণ ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাড়ির সম্পর্ক। বড় মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কন্যাসম স্নেহ করতেন। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ও তাঁকে মাতৃসম শ্রদ্ধা করতেন। তিনি অসুস্থ হলে ছুটে গিয়ে চিকিত্সর ব্যবস্থা করা, ঠাকুরবাড়িকে সাজিয়ে তোলা, সেখানকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা, বছরের পর বছর মমতা তা করেছেন। কারণ মতুয়া সম্প্রদায় আমাদের বৃহত্তর পরিবারের অঙ্গ। কিন্তু অভিষেক যাচ্ছেন বলে মন্দির বন্ধ রেখে বিজেপির কিছু গুন্ডা ঢুকিয়ে, জুতো পরা অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মন্দিরে তুলে যেভাবে অপবিত্র করা হয়েছে তার নিন্দা করছি। কালীঘাট, দক্ষিণশ্বরের মন্দিরে তো দরজা বন্ধ, দরজা খোলার মতো ঘটনা ঘটে না। মন্দিরে ঢুকতে অনুমতি লাগে না! আসলে অভিষেকের নবজোয়ারকে ভয় পেয়ে কখনও সিবিআই-ইডি, কখনও রাতের অন্ধকারে হামলা, কখনও অভিষেকের পুজো করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে তারা এই কাণ্ড করেছেন। অভিষেক যদি চাইতেন তাহলে ৫ মিনিটের মধ্যেই ওদের সরিয়ে পুজো দিতে পারতেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়য় অত্যান্ত সহনশীল ও পরিণত রাজনীতিবিদের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা মন্দিরে ঢুকতে পারতাম। কিন্তু ঢুকিনি। কারণ আমরা গোলমাল চাই না। মানুষ বিচার করবেন।
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, গতকাল কারা ওই পবিত্র মন্দিরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছিলেন? কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ওখানে ছিলেন। বিজেপির গুন্ডারা ওখানে দাঁড়িয়েছিল। জনসংযোগযাত্রা দূরে হলেও অভিষেকের স্বাভাবিক ইচ্ছে ছিল ওই পবিত্র মাটিতে পৌঁছনো এবং শ্রদ্ধা জানানো। সেই পবিত্র জায়াগায় জুতো পরে সেন্ট্রাল ফোর্সকে নিয়ে কেউ ঢুকলেন কারা? খালি পায়ে অনেকে ঢুকেছিলেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন কিছু দুষ্টু মানুষ। আমদের প্রশ্ন, আগামিদিনেও কি এরকম দৃশ্য আমরা দেখব? মন্দিরে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেটা যুদ্ধক্ষেত্রে নয়। গতকাল সংবাদমাধ্যেম ওই ঘটনা নিয়ে তর্কবিতর্ক হচ্ছিল। সেখানে ছিলেন আমাদের একজন মুখপাত্র। সেই বিতর্কে বিজেপির এক নেত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ঠাকুরনগরে অভিষেক কেন গেলেন? ওই মন্দিরে তিনি কেন ঢুকবেন? তিনি তো ব্রাহ্মণ। আমাদের প্রশ্ন, ধর্ম, জাতি, ভাষা নিয়ে তারা বিভেদ তৈরি করছেন, এখন ব্রাহ্মণ বলে মন্দিরে যেতে পারবেন না? এতে আমাদের ভাবাবেগে আঘাত লাগছে।
বিজেপি নেত্রীর ওই কথার রেশ ধরে কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী যখন সেখানে যান তখন কেন তাঁরা প্রশ্ন তোলেন না যে রাজনীতি করা হচ্ছে? ওখানে অভিষেকের রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। উনি ওখানে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ বলে ঢুকতে দেবে না? বিজেপি কি বাংলাকে আবার মণীপুর করার চেষ্টা করেছে? হিন্দু-মুসলমান ছিল। এখন আবার ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ চলে এল! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ বলে পুজো দিতে পারবে না? ওরা বিষয়টিকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে? মন্দিরে জুতো পরে উঠেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শান্তনু ঠাকুরের উচিত হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়া।
তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, মমতা বন্দ্যোপাঝধ্যায় বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যতবার ঠাকুরনগরে এসেছেন ততবারই মন্দিরে এসেছেন। আমার শাশুড়িকে মা হিসেবে মমতা শ্রদ্ধা করেন। বিজেপি যে নেত্রী এখন এসব কথা বলছেন তাঁকে বলতে চাই হরিচাঁদ ঠাকুর ২০০ বছর আগে জাতপাত ভেঙে একটা মানবতার ধর্ম তৈরি করেছিলেন। আমাদের মন্দিরে মুসলমানও পুজো করতে পারে, খ্রিষ্টানও পুজো করতে পারে। ব্রাহ্মণও পুজো করতে পারে। আমরা জাতপাত মানি না। ঠাকুর এই ধরনের শিক্ষা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন। গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগের আগে থেকে মন্দিরে তাণ্ডব করেছে বিজেপি আরএসএস। রড নিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছিল চারদিকে। সেন্ট্রাল ফোর্স জুতো পায়ে ঢুকে মন্দিরে উঠে পড়ে। আমাদের এক মহিলাকে মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে। এক জনকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। ৭-৮ জন আহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ঠাকুনগরের ঠাকুবাড়িতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাওয়াকে কেন্দ্র করে তুলকালাম হয় ঠাকুরবাড়ি। তাঁর নিরাপত্তায় থাকা পুলিসকে মন্দির থেকে বের করে দেওয়া হয়। অভিষেক আসলে তাঁকে মন্দিরে ঢুকতে দেএওয়া হয়নি। মন্দিরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে তা খুলেও দেওয়া হয়। এদিন নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পরেই মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছন অভিষেক। হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর, বড়মা-র ঘরে গিয়ে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও সুজিত বসু এবং তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়।
অভিষেক বলেন, ‘প্রতিবার কর্মসূচি শুরু করার আগে বা কর্মসূচির শেষে ঠাকুরবাড়িতে এসে পুজো দিই। আমার রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে হাবড়ার। এখান থেকে প্রায় কুড়ি কিমি দূরে। আমরা এখানে আসার কথা ছিল, পুজো দেওয়ার জন্য। আমি কী করে ঢুকতে না পারি, জোরজবরদস্তি মন্দিরটাকে ঘিরে রেখে দিয়েছে বিজেপির লোক দিয়ে। এই মন্দির কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয়। যে কোন ধর্মের মানুষ এখানে আসতে পারে। গুরুচাঁদ বা হরিচাঁদ ঠাকুরের যে লড়াই, সেটাকে পুরোপুরি কলুষিত করল শান্তনু ঠাকুর ও তাঁর গুন্ডাবাহিনী’।