আলাদা করে রাখার মতো পরিকাঠামো নেই। তাই তৃতীয় লিঙ্গের অন্তত আট-দশজন বন্দিকে একই সেলে রাখা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠল দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে একজন বন্দি শুক্রবার রাতে সেলের ভিতরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে আরজি কর হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়।
জেলবন্দি এই অভিযুক্তরা মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর মাধ্যমে তাঁদের অভিযোগ আইনজীবীর পাশাপাশি কারা দপ্তর ও রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য আইনি কাজ করা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌশিক গুপ্ত রবিবার বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মধ্যেও পুরুষ ও মহিলা রয়েছেন। তাঁদের একই সেলে রাখা হলে সেক্ষেত্রে সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
কেন এভাবে নির্বিচারে একই সেলে আটকে রাখা হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের বন্দিদের? দমদম সংশোধনাগারের সুপার সুপ্রকাশ রায়ের বক্তব্য, ‘সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওঁদের একটি এনক্লোজারে রাখতে বলা হয়েছিল। তাই তাঁদের আলাদা একটি জায়গায় একসঙ্গে করে রাখা হয়েছে, যতক্ষণ না তাঁদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন থাকার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে।’
তাঁর সংযোজন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে কে পুরুষ আর কে মহিলা, কী করে বুঝব? ওঁরা যা বলেন, সেটাই মেনে নিতে হয়। তাঁদের আলাদাভাবে রাখতে পরিকাঠামো গড়ার জন্য পূর্ত দপ্তরের কাছে আলাদা রিকুইজিশন দেওয়া হয়েছে। যতদিন সেটা না হচ্ছে, ততদিন অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা করতেই এঁদের আলাদা এনক্লোজারে রাখতে হচ্ছে।’ যদিও কোনও বন্দি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন কি না, তা নিয়ে সুপার মন্তব্য করতে চাননি।
কৌশিকের অভিযোগ, ‘২০১৪ সালে নালসার গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও আইনি স্বীকৃতি পেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও রাজ্যের কারা দপ্তরের গাইডলাইনে তাঁদের জন্য কোনও জায়গা হয়নি। এখানে এভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য, শুধু দমদম নয়, গোটা রাজ্যের সব জেলেই কমবেশি একইরকম সমস্যা রয়েছে। এনিয়ে আরও সংবেদনশীল হয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।