দিন হোক বা রাত। অসহ্য গরমে শহরবাসীর নিত্যসঙ্গী এখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট। মঙ্গলবারই বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, রাজ্যে কোথাও লোডশেডিং নেই। অভাব নেই বিদ্যুতের। কিছু কিছু জায়গায় কারিগরি সমস্যার জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। যদিও ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে কলকাতার যে সমস্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে, তার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী লোডশেডিং। অর্থাৎ, বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় জোগান কম।
সুভাষগ্রামে পাওয়ার গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেয় সিইএসসি। কলকাতা ও রাজ্যের বাইরে থেকে সিইএসসি যে বিদ্যুৎ নিয়ে আসে, সেটাই সুভাষগ্রামের পাওয়ার গ্রিডের সাব-স্টেশন থেকে সিইএসসি নেয়। তার পর তা কলকাতা ও তার আশেপাশে গ্রাহকদের বণ্টন করে সিইএসসি। আর এই সুভাষগ্রামেই হয়েছে সমস্যা।
বিদ্যুৎ দপ্তরের একটি সূত্রের দাবি, সুভাষগ্রামের ওই সাব-স্টেশন থেকে বহুদিন ধরে সিইএসসি দিনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিচ্ছিল। যে পরিমাণ সরবরাহ নেওয়ার কথা, তার থেকে বেশি নেওয়ার জন্য পাওয়ার গ্রিড সিইএসসি-কে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে বলেছিল। তা তারা না করাতে ওই সাব-স্টেশনে পাওয়ার গ্রিড গত বেশ কয়েকদিন সিইএসসির সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছে। তার ফলে চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার অনেক জায়গাতেই লোডশেডিং হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলঘরিয়া, নিমতা, দমদমের একাংশ-সহ অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। সোদপুরের ধানকল এলাকায় প্রায় দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বুধবার সকালেও কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় খানিকক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ মিলেছে। ওই সূত্রটি বলছে, এই সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকার অন্যতম মূল কারণ সুভাষগ্রামে পাওয়ার গ্রিডের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত জোগান না মেলায় অনেক জায়গাতেই লোডশেডিং হয়েছে। তবে সম্প্রতি সিইএসসি সুভাষগ্রামে লোড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার রাতে ইএম বাইপাস সংলগ্ন কসবা থেকে বিজন সেতু পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন ছিল। উত্তরের পাইকপাড়ার একটা অংশেও কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্য একটি সূত্রের দাবি, ‘রাতে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকার মূল কারণ স্থানীয় স্তরে টেকনিক্যাল ফল্ট। বুধবার রাতে আনন্দপুরে সিইএসসি-র একটি হাইটেনশন লাইনে বড় ফল্ট হয়েছিল। এর ফলে কসবা এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না।’
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ বণ্টন লাইনে এবার ফল্ট বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণে পর্যাপ্ত লগ্নি না হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, গত কয়েক বছর রাজ্যে বিদ্যুৎ মাশুল না বাড়ায় বণ্টন সংস্থাগুলি তাদের নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না।