‘এমন সুচেতন সিদ্ধান্ত আগে নিলে বামজমানায় আমি অত্যাচারিত হতাম না!’


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের(Buddhadeb Bhattacharjee) মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য(Suchetana Bhattacharya), তাঁর লিঙ্গ পরিবর্তন করে হতে চান সুচেতন ভট্টাচার্য। ইতোমধ্যেই মনোবিদেরও পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি পিপলস রিলিফ কমিটির আয়োজিত এলজিবিটিকিউআইএ+(LGBTQIA+) মানুষদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মশালায় নিজের এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। তাঁর গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন সুপ্রভা রায়। তিনি লেখেন, ‘এবার সে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয় লিঙ্গের ও প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সংগ্রামে অবতীর্ণ করতে চায় নিজেকে।আর সেদিনের পর থেকে নিজের ভিতর আটকে থাকা সুচেতন এখন অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে উঠেছে।এলজিবিটিকিউআইএ+ কমিউনিটির মানুষদের জীবন যন্ত্রণা ও লড়াই সংগ্রামের সাথে মিশতে চলেছে সুচেতন’।

আরও পড়ুন- Suchetana Bhattacharya: বুদ্ধ ঘরে বিপ্লব, লিঙ্গ পরিবর্তনে সুচেতনা এখন ‘সুচেতন’

সুচেতনার এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কী বলছেন বাংলার প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রফেসর ড. মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়, বাচিকশিল্পী সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহা

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটালের তরফে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রথম হওয়ার জন্য আমার যে লড়াই ছিল সেটা বড় কথা নয়। সেদিন সবাই যে বলেছিল ‘ওকে মেরে ফেলো’ কিন্তু সেই জায়গা থেকে এত মানুষ যে বেঁচে উঠছে সেটাই আমার আনন্দ। এটা আমার প্রথম আলো। তবে অবস্থা এখনও আগের মতোই আছে। তাই ওঁ বলছে আমার বাবা-মাকে টানবেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার ঐ লেখা পড়েই মনে হচ্ছে বাবা-মা সভ্য সমাজের অংশ, আমি নিজেকে আত্মহুতি দিচ্ছি। আমি যখন ওকে প্রেসিডেন্সিতে দেখতাম তখনই আমি বুঝেছিলাম ও জেন্ডার চেঞ্জ করতে পারে। কিন্তু ওর চেতনা অনেকটা দেরিতে জাগল, এটাই দুঃখ।চেতনাটা বাম আমলে জাগলে ভালো হত। বাম আমলে আমায় প্রচুর কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি পিএইচডির সময় দুটো ইনক্রিমেন্ট পাইনি কারণ সার্জারির পরে পিএইচডি করেছিলাম। আমি বাম আমলে সেই পিএইচডির স্বীকৃতি পাইনি। এটা গ্রীক ট্র্যাজেডির ফিরে আসা, এটা কাকতালীয় নয়’।

তিনি আরও বলেন, ‘একটা সময় আসবে যখন ট্রান্সজেন্ডাররা জনপ্রতিনিধিত্ব করবে, রাষ্ট্রপ্রধান হবে, আমি এখনই বলে রাখলাম। আমি অনেক লড়াই করেছি, বাড়িভাড়া পাইনি, গাছতলায় থেকে চাকরি করেছি, লড়াইয়ের শেষ নয়। আজ ভালো লাগছে যে বুদ্ধবাবুর মেয়ে চেতনা ফিরল, এটা তো হওয়ারই ছিল। অনেক দেরিতে এসে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারল’।  

বাচিকশিল্পী ও অভিনেতা সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা ওঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এটাকে আমি সাংঘাতিক কোনও বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করিনা। প্রত্যেকটা মানুষ তাঁর অস্থিত্বের নির্ণায়ক, তিনি কীভাবে পরিচিত হবেন, তাঁর যৌনপ্রবৃত্তি, তাঁর লিঙ্গ রাজনীতি সবটাই তাঁর হাতে। তিনি সুচেতনা থেকে সুচেতন হোন বা সুচেতন থেকে সুচেতনা হোন এটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি সেটাকে সম্মান তো করিই তবে সেটাকে বিপ্লব বলে মনে করি না। একজন তাঁর পরিচয় কীভাবে দেবেন, তাঁর জন্য কী সর্বনাম ব্যবহার করবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমার কাছে এটা অনুপ্রেরণাদায়ক তো বটেই তবে বৈপ্লবিক নয়’।

আরও পড়ুন- Suchetana Bhattacharya: বুদ্ধকন্যার ‘সুচেতন’ লড়াইয়ের পাশেই মদন-দেবাংশু-সৃজন; ধরি মাছ, না ছুঁই পানি বিজেপির!

সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহা বলেন, ‘সেই মিটিঙে আমিও ছিলাম যেখানে ও বলল। এটা বিশাল ব্যাপার। আগে কানাঘুষো শুনেছিলাম। তবে এখন মনে হয়, এই জিনিসগুলো আরও বেশি বেরিয়ে আসা উচিত। আমি আজকেই পড়লাম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজেই মেয়েকে ছোটবেলায় দাড়ি গোঁফ করে দিতেন, মানুষ নিজের বাবা-মায়ের কাছে যদি এই সহানুভূতিশীলতা নিয়ে বড় হয়, এগুলো অনুপ্রাণিত করে’।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *