Alipurduar Chndi Temple History : আলিপুরদুয়ারের প্রাচীন চণ্ডী মন্দিরে লুকিয়ে ৫০০ বছরের ইতিহাস, জেনে নিন – alipurduar 500 years ancient chandi temple has a interesting history


আলিপুরদুয়ারের চণ্ডীর ঝাড় এলাকার চণ্ডী মন্দির। এলাকাবাসীর বিপুল শ্রদ্ধা ও ভক্তি এই দেবীকে ঘিরে। আজ সেই দেবীর পুজো। কিন্তু কেউ কি জানত যে, দেবী চণ্ডীর পদতলে কালজানি ও চেকো নদীর পলির নিচে গোটা একটা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস চাপা পড়েছিল। চাপরের পাড় ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই অখ্যাত গ্রামে লুকিয়ে রয়েছে পাঁচশ বছর পূর্বের জয় পরাজয়ের ইতিহাস। সেই অজ্ঞাত ইতিহাস উদঘাটিত হয়েছে আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শৈলেন দেবনাথের গবেষণার মাধ্যমে। রাজধানী দিল্লি থেকে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ, KAMTAPUR : AN UNEXPLORED HISTORY OF EASTERN INDIA বইতে এই বিষয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি।

গ্রামবাসীদের কথায়, এক সময় ১১টি গ্রাম মিলিত হয়ে পুজোয় অংশ গ্রহণ করত। ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে এই চণ্ডী ঝাড়ের দেবী চণ্ডীই হলেন রাজা বিশ্ব সিংহের কোচ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার বিজয় চিহ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা নরেন রায় সরকার বলেন, ‘দেবী চণ্ডী খুবই জাগ্রত। আমাদের বাবা ঠাকুরদারও এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কোচবিহার রাজ আমলের দেবী চণ্ডীকে আমরা পুজো দিয়ে আসছি। দেবীকে পুজো দিয়ে সব শুভ কাজ হয় গ্রামে।’

অন্যদিকে অধ্যাপক শৈলেন দেবনাথ বলেন, ‘কামতাপুর সাম্রাজ্যের শুরু ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে আর সমাপ্তি ঘটে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে। কামতাপুর ছিল উত্তর পূর্ব ভারতের হিন্দুরাজ্য। কামতাপুরের প্রথম রাজধানী ছিল চিলাপাতাগড়, তারপর ময়নাগুড়ি, পঞ্চগড়, ভেটাগড়ি এবং সবশেষে গোসানিমারি। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুলতান হোসেন শা কামতাপুর দখল করে নেন। তারপর তিনি তাঁর সেনাবাহিনীর জেনারেলদের এক একটি জায়গার সামরিক বিভাগ পরিচালনা ও রাজস্ব আদায়ের অধিকার দেন। তার মধ্যে সেনাবাহিনীর অন্যতম জেনারেল ছিলেন তুর্বক খান ওরফে তুর্কা খান। তাঁর প্রাসাদ ছিল চণ্ডীঝাড় গ্রামের পূর্ব দিকে গদাধর নদীর তীরে কালজানি ও চেকো নদীর সংযোগ স্থলে। সেখানে উঁচু ঢিবির মতো জায়গা আজও রয়েছে। আর তুর্কা খানের সেই প্রাসাদের ১ কিলোমিটারের মধ্যেই বর্তমানের এই চণ্ডী মন্দির।’

গ্রামবাসীদের কথায়, গ্রামের মানুষ দেবী চণ্ডীর আশীর্বাদ না নিয়ে কোনও নব দম্পতিকে ঘরে ওঠেন না। এমনকী বাড়িতে অন্য দেবদেবীর পুজো করার আগেও তাঁরা দেবী চণ্ডীর পুজো দেন। আষাঢ় মাসে অম্বুবাচির আগে দেবী চণ্ডীকে বাড়ি বাড়ি ঘোরাতে হয়। এমনকী কোনও একসময় পুজারি পুজো দিতে এসে মন্দির প্রাঙ্গণে নিয়মিত বাঘও দেখতে পেতেন। এছাড়া এলাকাবাসীকে কলেরা ও বসন্ত রোগের প্রকোপ থেকেও দেবী চণ্ডীই রক্ষা করে আসছেন বলে মনে করেন। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা বাদল দেবনাথ বলেন, ‘কোচবিহারের মহারাজার সময় থেকে দেবী চণ্ডীর এই পুজা হয়ে আসছে। আগে ১১টি গ্রাম একত্রিত হয়ে এই পুজো করত। এখন মাত্র দুটি গ্রাম মিলে এই পুজো করে। নিত্য নতুন মন্দির গড়ে ওঠায় চণ্ডী মন্দিরের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন করে মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রায়োজন।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *