সংখ্যায় ২৭, বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা। এক দশক আগে, ২০১৩-তে শিয়ালদহ স্টেশনে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই প্রাচীন মূর্তিগুলো শেষ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয় পেল স্টেট জুডিশিয়াল মিউজি়য়ম ও রিসার্চ সেন্টারে। মঙ্গলবার রেল পুলিশের (জিআরপি) ডিআইজি বরুণ কুমার উদ্ধার হওয়া ওই মূর্তিগুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দিলেন রাজ্য সরকারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল এবং অফিশিয়াল ট্রাস্টি (এজিওটি) বিপ্লব রায়ের হাতে।
২০১৩-র ২ এপ্রিল। নয়াদিল্লি ছেড়ে আসা ডাউন দুরন্ত এক্সপ্রেস সবে এসে দাঁড়িয়েছে শিয়ালদহ স্টেশনে। ভারী কয়েকটা বস্তা ধরে টানাটানি করতে থাকা কয়েক জনের চালচলন ভালো লাগেনি রেল পুলিশের কয়েক জন কর্মী ও অফিসারের। বস্তায় কী আছে, তা জিআরপি-র কর্মী-অফিসাররা জানতে চেয়েছিলেন।
তাতেই ঘাবড়ে যায় বস্তাগুলো টানতে থাকা লোকজন। শেষ পর্যন্ত বস্তাগুলো খোলার পর রেল পুলিশের চক্ষু একেবারে চড়কগাছ। একটার পর একটা ধাতব মূর্তি বেরোতে শুরু করেছিল ওই বস্তাগুলো থেকে। তার পর এতদিন, ১০ বছর ধরে ওই ২৭টি মূর্তি রাখা ছিল শিয়ালদহ স্টেশনে রেল পুলিশের মালখানায়। শেষ পর্যন্ত তাদের গতি হলো স্টেট জুডিশিয়াল মিউজি়য়ম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে। মূর্তিগুলো পেল যথাযোগ্য জায়গা।
রেল পুলিশের ডিআইজি বরুণ কুমার মঙ্গলবার বলেন, “এই দুর্লভ, প্রাচীন মূর্তিগুলো মালখানায় পড়ে থাকার জিনিস নয়। ওদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। সেই জন্যই আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শেষ পর্যন্ত জুডিশিয়াল মিউজি়য়মে ওগুলো রাখা হবে বলে ঠিক হয়।”
কিন্তু চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সব মূর্তি কবেকার? কোন কোন দেবতার মূর্তিই বা ছিল ওই চোরাকারবার-চক্রের কাছে? এজিওটি বিপ্লব রায় বলেন, “উপর উপর দেখে মনে হচ্ছে, অষ্টাদশ শতকের একটি কৃষ্ণমূর্তি এই ২৭টির মধ্যে প্রাচীনতম। অষ্টধাতুর একটি বিষ্ণুমূর্তিও রয়েছে। একটি শ্রীযন্ত্র রয়েছে। শক্তিপুজোর গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী এই শ্রীযন্ত্র।”
আবার কারও কারও মতে, এই যন্ত্র ঘরে রাখলে সংসারে অভাব দূর হয়। এজিওটি-র বক্তব্য, “শিয়ালদহ হয়ে বনগাঁ এবং সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত— এটা চোরাকারবারিদের খুব পছন্দের একটি রুট। সতর্ক থাকলে এই রুটে এমন বহু সামগ্রী উদ্ধার করা যাবে।”
স্টেট জুডিশিয়াল মিউজি়য়মে ইতিমধ্যেই প্রদর্শনের জন্য ৪০ হাজার সামগ্রী জমা করা হয়েছে বলে বিপ্লব রায় জানিয়েছেন। মোট ২৫টি বিভাগে প্রদর্শনগুলো ভাগ করা থাকবে। ইতিমধ্যেই ওই মিউজি়য়মে একটি মমি নিয়ে আসার ব্যাপারে রাজ্যের কথা চলছে ইজরায়েলের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সঙ্গে।