সুখ্যাত সাধক কবি কন্ঠমশাইয়ের ব্যবহৃত সামগ্রী ও তাঁর রচিত পুঁথি, পান্ডুলিপি, বই, কীর্তন পালা সহ নানান ছবি সহ বহু মূল্যবান স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে সেখানে। পাশাপাশি অতিথিশালার নিচে মহড়া শালা ও রান্নাঘর থাকবে। কন্ঠমশাইয়ের বংশধরদের আর্থিক দুর্বলতার কারণে স্মৃতিগুলি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে চলেছিল বলে দাবি বর্তমান বংশধরদের।
তাঁদের দাবি, ADDA-র সহযোগিতায় তথা সাহায্যার্থে ইতিমধ্যেই স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় চিরকৃতজ্ঞ বংশধরেরা। বর্তমান বংশধর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৮২ সালে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ধবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হয়েছিলেন।
অভাবের সংসারে রুটিরুজির টানে কলকাতায় এক মাড়োয়ারির বাসনের দোকানে কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে নিয়োগকারী রক্ষিতার কাছে সঙ্গীত শেখেন। তাঁর শিল্পী সত্তা দেখে সেখান থেকেই এক যাত্রাদলের মালিক তাঁকে যাত্রার দলে নিযুক্ত করেন। সেখানে তিনি অত্যন্ত সুখ্যাতি অর্জন করেন।
তারপরে সংগীতবিদ্যা নিয়ে গ্রামে ফিরে তিনি নিজের এক দল গঠন করেন। দিন দিন স্বভাবকবি নামে তাঁর পরিচিতি আরও বাড়তে থাকে। যেখানে যা দেখতেন তাই নিয়েই তৎক্ষনাৎ কবিতা বানিয়ে ফেলতেন। আবার তখনই ওই কবিতায় সুর চড়িয়ে গানও বেঁধে ফেলতেন। তাঁর এই প্রতিভা মুগ্ধ করত শ্রোতাদেরও।
তাঁর প্রতিভার জন্য হেতমপুর রাজার অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি রাজার রাজসভার সভাকবি হিসেবেও ছিলেন একসময়। কন্ঠমশায় তাঁর সুরেলা কন্ঠে ও লেখনি গুনে খুব অল্প সময়েই ব্যাপক ক্ষ্যাতি অর্জন করে ফেলেছিলেন। পাশাপাশি বিপুল সম্পত্তির অধিকারীও হয়ে উঠেছিলেন।
তাঁর এক বংশধর বলেন, “কন্ঠমশায়ের মধ্যে ঐশ্বরিক শক্তি বিরাজমান ছিল। তাঁর সুরে ও কন্ঠে মুগ্ধ হতেন স্বয়ং ভগবানও। কন্ঠমশাইয়ের গান শুনে প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব মহাশয়ও।” কন্ঠমশাইয়ের ছেলে ছিলেন কমলাকান্ত মুখোপাধ্যায়। আবার তাঁর ছেলে দুর্গাদাস মুখেপাধ্যায়।
দুর্গাদাসবাবুর সাত ছেলেরা হলেন বর্তমান চতুর্থ বংশধর। চতুর্থ বংশধরের এক ছেলে গনেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মৃত্যুর পূর্বে কন্ঠমশাইয়ের করা ভবিষ্যৎবাণী এক্কেবারে মিলে যায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তার অর্জন করা বিপুল সম্পত্তি। কন্ঠমশাই ১৯১১ সালে ত্রিবেণীর গঙ্গায় নিজের ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেন। ইচ্ছামৃত্যু বরণের পূর্বে তিনি বলে গিয়েছিলেন তার এই বিষয় সম্পত্তি কিছুই থাকবে না। হতদরিদ্র হবে এই পরিবার। তবে বংশ রক্ষা হবে। কন্ঠমশাইয়ের মত একজন বিখ্যাত কবির ইতিহাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছিল। ADDA-র এই উদ্যোগে সেগুলি ফের পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।”
ADDA-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়ের বর্তমান বংশধরেরা আবেদন করেছিলেন। সেই মতো কণ্ঠমশায়ের স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালে। কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এর আগেও প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে মন্দির সংস্কার করা হয়েছে।”