সম্প্রতি পুর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে নিউ আলিপুর এলাকায় একটি বাড়ির চত্বরে বিভিন্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে। একাধিক জায়গায় রয়েছে নোংরার স্তূপ। বাড়ি মালিক সেই নোংরা এবং জমা জল পরিষ্কারে উদাসীন তা স্পষ্ট। দীর্ঘদিন জল ও নোংরা জমতে জমতে কার্যত মশার আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে বাড়ির চত্বর। অন্য়দিকে, ফাঁকা জমিটিতে ময়লার পাহাড়। তা পরিষ্কারেও কোনও পদক্ষেপ নেননি সেই ফাঁকা জমির মালিক।
বর্ষায় মশার বাড়বাড়ন্ত নতুন নয়। পাল্লা দিয়ে চলে ডেঙ্গির চোখরাঙানি। প্রতি মরসুমেই একই সমস্যা। ডেঙ্গি মোকাবিলায় রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয় পুরসভাকে। পরিস্থিতি সামালে একটু এদিক-ওদিক হলেই সমালোচনার ঝড়ও ওঠে বিস্তর। তাই এবার আগেভাগেই সতর্ক থাকছে চাইছে পুর কর্তৃপক্ষ। মাঠে-ময়দানে কোমর বেঁধে কাজে নেমেছে পুর কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য বিভাগ। ডেঙ্গি মোকাবিলায় কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি শুরু করা হয়েছে। কোথায় ময়লার স্তূপ ডাঁই হয়ে রয়েছে কিনা বা কোথাও জল জমে রয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে সবটাই। গত বছর যে জায়গাগুলি কার্যত ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ ছিল সেই জায়গাগুলিতেও অভিযান চালানো হচ্ছে।
গতমাসে পুরসভার একটি দল নিউ আলিপুর এলাকা ঘুরে দেখে। এলাকার একটি বাড়িতে জন্ম নিচ্ছে মশার লার্ভা। নজরে আসে পুর আধিকারিকদের। এরপরেই ওই বাড়ির মালিককে একটি নোটিস পাঠায় পুরসভা। ১ সপ্তাহের মধ্যে বাড়িটিতে জমে থাকা নোংরা জল ও ময়লা পরিষ্কার করে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয় বাড়ির মালিককে। কিন্তু পুরসভার নোটিসের পরও টনক নড়েনি মালিকের। দ্বিতীয় দফার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় আগের মতোই হাল রয়েছে বাড়িটির। এরপরেই মিউনিসিপ্যাল কোর্টের দ্বারস্থ হয় পুর কর্তৃপক্ষ। শাস্তি স্বরূপ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বাড়ি মালিকের থেকে ১ লাখ জরিমানার অনুমতি চায় পুরসভা।
অন্যদিকে নিউ আলিপুরের কাছেই একটি ফাঁকা জমির মালিকের থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুরসভা। বহুদিন ধরেই ওই ফাঁকা জমিটিতে কাঁড়ি কাঁড়ি নোংরা জমা হচ্ছিল। মশার লার্ভার ছড়াছড়ি সেখানে। হেলদোল নেই মালিকের। নজরে আসতেই পুর কর্তৃপক্ষ মালিকের থেকে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন আরোপ করা হয়েছে। যারা সেই নিয়ম ভঙ্গ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুর কর্তৃপক্ষ। কোনও বাড়িতে যদি ময়লার ঢিপি বা জমা জল দেখতে পাওয়া যায়, আর তা যদি মশার জন্মস্থানে পরিণত হয় তাহলে কোনও রকম রেয়াত নয়। বাড়ির মালিকের খোঁজ না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে বাড়িতে যারা বসবাস করছেন তাদের থেকেও জরিমানা নেওয়া হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ডেঙ্গি মোকাবিলার গাইডলাইন নগরবাসী না মানলে কলকাতা পুরসভার ৪৯৬ ধারা অনুসারে ১ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করতে পারে। বাড়ির চত্বর পরিষ্কার না হলে, কোথাও জল জমে থাকলে প্রথমে পুরসভা বাড়ি মালিককে সতর্ক করবে। তারপরেও সেই নির্দেশিকা অগ্রাহ্য হলে বাড়ি মালিকের থেকে জরিমানা ধার্য করতে পারে পুরসভা। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে (Solid Waste Management Department) বাড়ি মালিকের থেকে তৎক্ষণাৎ জরিমানা আদায়ের দায়িত্ব দিয়েছে পুরসভা।