রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘চিকিৎসা শুরুর পরে দু’টি কৃষ্ণসারের শারীরিক পরিস্থতিই আপাতত স্থিতিশীল। যে বনকর্মীরা কৃষ্ণসারের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিলেন, তাঁরাও সুস্থ রয়েছেন। তার পরেও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কলকাতা থেকে একজন মুখ্য বনপালকে পাঠানো হয়েছে।’ শিলিগুড়ি বেঙ্গল সাফারিতে মোট ১২টি কৃষ্ণসার রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ওই ১২টি কৃষ্ণসারের সঙ্গে ৮টি হগ ডিয়ার ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকে আনা হয়। প্রথম থেকেই এগুলিকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়। হঠাৎ করে কেন দু’টি কৃষ্ণসারের দেহে টিবির সংক্রমণ মিলল, সেটাই স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে বনমন্ত্রীর বক্তব্য, কৃষ্ণসার হরিণদের আর তৃণভোজী পার্কে না ছেড়ে তাদের জন্য ছোট করে আলাদা পার্ক করা হবে।
কৃষ্ণসার অত্যন্ত স্পর্শকাতর প্রাণী। খুব দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। এমনকী, মানুষের দেহের রোগেও কৃষ্ণসার দ্রুত আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু পার্কের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের দেহে টিবির সংক্রমণ না-মিললে কী করে দু’টি কৃষ্ণসার সংক্রমিত হল, সেটাই এখন খুঁজে দেখা হচ্ছে। রাজ্যের মধ্যে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি বন দপ্তরের কাছে বিশেষ গুরুত্বের।
প্রথমত, এটি মুক্ত চিড়িয়াখানা। বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চলের একাংশ ঘিরে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। চালু হওয়ার পরেই এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মাত্র কয়েক বছর আগে চালু করা হলেও কৃত্রিম প্রজননেও এটি দেশের অন্যতম চিড়িয়াখানা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বন দপ্তরের সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণীদের মধ্যে টিবির সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কি না যাচাই করতে প্রতি বছর একবার করে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। তখনই এই দুটি কৃষ্ণসারের দেহে টিবির সংক্রমণ মিলেছে।
কৃষ্ণসার হরিণ
হিন্দু পুরাণে কৃষ্ণসার হরিণের উল্লেখ রয়েছে। তারা কৃষ্ণের রথ টানত। ১৯৯৮ সালে এই কৃষ্ণসার হরিণকে হত্যার অভিযোগ গ্রেপ্তার করা হয় সলমন খানকে। ভারতে সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে কৃষ্ণসার হরিণ বা ইন্ডিয়ান অ্যান্টিলোপ। রাজস্থানের বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র প্রাণী। এই হরিণকে তারা পুজো করে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চল এদের আবাসস্থল।
পশুদের মধ্যে কী ভাবে টিবি ছড়ায়?
টিবি সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তবে রকমফের আছে। মানব শরীরের টিবি পশুদের দেহেও ছড়াতে পারে। পশুদের দেহে মেলা টিবির জীবাণু মানব শরীরে খুব সামান্য ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে।
যাদের হয়েছে তাদের থেকে অন্য পশুদের হতে পারে?
হতেই পারে। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ প্রথম থেকেই কৃষ্ণসারগুলিকে অন্য তৃণভোজীদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষায় দুটি কৃষ্ণসারের শরীরে টিবি ধরা পড়ায় ওই দুটিকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।