কালো পুলিশ ভ্যানে চেপে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রবিবার বেলা ১২ নাগাদ ঢাকুরিয়ার মুখার্জি পাড়াতে আসেন দেবযানী। আশেপাশের বাড়ি থেকে উৎসুক মুখেরা তখন জেলবন্দি দেবযানীকে দেখার জন্য উঁকি ঝুঁকি মারছেন। সবুজ পোশাকে ওড়নায় মুখ ঢেকে বাড়িতে ঢোকে এক সময়ের বিশাল সারদা সাম্রাজ্যের কর্ত্রী।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জেলই দেবযানীর স্থায়ী ঠিকানা। রোজকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে জেলের খাবার। কিন্তু ১০ বছর পর মেয়ে বাড়িতে এসেছে, তাঁকে কী আর খালি মুখে ফেরানোা যায়? না বাড়ি থেকে খালি মুখে ফেরেননি দেবাযানী। পরিবারের তরফে দেবযানীর জন্য ছিল বিশেষ আয়োজন।
‘নলিনী নিকেতন’-এ দেবযানী প্রবেশ করার কিছক্ষণের মধ্যে বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়ায় এক ফুড ডেলিভারি বয়। পরিবারের তরফে অর্ডার দেওয়া হয়েছিল নয় প্যাকেট বিরিয়ানি। কিছুক্ষণ পর এল বোতলবন্দি কোল্ড ড্রিংকসও। পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার বিরিয়ানি, মাংস, মিষ্টি সহযোগে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন দেবযানী। মা ও পরিবারের অন্যান্যদের জন্য নিয়ে এসেছিলেন উপহারও। বিকেলে দেবযানীর জন্য কুকিজ ও কেক অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে প্রিয় খাবার চেখে দেখা হয়নি।
পরিবার সূত্রে খবর, অসুস্থ মাকে দেখে এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের অত্যন্ত ‘ঘনিষ্ঠ’ দেবযানী। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে কাঁদতে থাকেন মাও। মেয়েকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন মা শর্বরী মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘক্ষণ মা ও মেয়ের মধ্যে কথা হয়।
ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধে ছ’টা ছুঁই ছুঁই। পুলিশের তরফে দেবযানীকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁর প্যারলে মুক্তির সময় শেষ। ফিরতে হবে দমদম জেলে। গোমরা মুখে চোখ ছলছল অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন দেবযানী। তাঁকে ঘিরে রেখে পুলিশ।
বাড়ির আশেপাশে তখন সংবাদমাধ্যমের ভিড়। দেবযানীর দিকে উড়ে আসছে একেরে পর এক প্রশ্ন। কেউ জানতে চাইছেন ‘বাড়ি এসে কেমন লাগছে’? কারও প্রশ্ন ‘মায়ের সঙ্গে কী কথা হল?’ জবাবে দেবযানী বলেন, ‘মা অসুস্থ। হার্টে স্টেন্ট বসেছে। দয়া করে আমাকে প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না। মায়ের সঙ্গে কী কথা হল, সেটা জনসমক্ষে বলব না।’ কালো প্রিজন ভ্যানে উঠে পড়েন তিনি। ফের ফিরে যাওয়া। গন্তব্য সেন্ট্রাল জেল।