অসৎ থেকে সত্যের পথে, অন্ধকার থেকে আলোয় ও মৃত্যু থেকে অমৃতের পথে নিয়ে চলার আর্তির নামই ‘বিবর্তন’, যা সম্প্রতি শুরু হয়েছে রাজ্যের কয়েকটি সংশোধনাগারে। গরাদের ও-পারে মাদকের রমরমা রুখতে জেলবন্দিদের ‘বিবর্তন’ই চাইছে রাজ্য কারা দপ্তর। ‘প্রাপ্তি’ নামে একটি এনজিও-র সহায়তায় পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে এই উদ্যোগ প্রথম শুরু হয়েছিল বারুইপুর সংশোধনাগারে। দারুণ রেজাল্ট মেলায় সব সংশোধনাগারে এই পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এডিজি (কারা) সঞ্জয় সিং বলেন, ‘মাদকাসক্তি যেমন পাবলিক হেলথ-এর সমস্যা, তেমনই অপরাধীদেরও। অ্যারেস্ট-রিলিজ়-রি অ্যারেস্ট – এই সাইকেল থেকে তাদের বের করে আনা আমাদের লক্ষ্য। সে জন্যই এই পদক্ষেপ।’ তিনি জানান, বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায়, কেউ একজন খুচরো কোনও অপরাধের জন্য জেলে এল। দেখা গেল সে অ্যাডিক্টেড। জামিন পাওয়ার ক’দিন পরে ছোটখাটো অপরাধের জন্য আবার সে জেলে আসছে। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য এরা সাধারণত এই অপরাধগুলো করে। সে জন্য নেশামুক্তিই একমাত্র পথ।
আজ সোমবার ‘বিশ্ব মাদক বিরোধী দিবস’, সেই উপলক্ষে হাওড়া সংশোধনাগারে শুরু হচ্ছে ‘বিবর্তন’। সঙ্গী ‘চিরনবীন’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুরু হয়েছে শিলিগুড়ি ও দমদমেও। সংশোধনাগার সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের আওতায় আসা এক বন্দির আগে ব্রাউন সুগারের নেশা ছিল। চিকিৎসার পর আপাতত সে নেশার খপ্পর থেকে বেরিয়ে এসেছে। দিন কুড়ি আগে জেলে আসা আর এক বন্দির যেমন সময়মতো ড্রাগ না-পেলে উইড্রল সিম্পটম দেখা দিত। চিকিৎসার পর এখন সে-ও অনেকটা সুস্থ।
এডিজি (কারা) জানান, যে কোনও দিন রাজ্যের সব সংশোধনাগার মিলিয়ে ১৭০০-র বেশি মাদকাসক্ত বন্দি থাকে। ২০-৩০ জন জামিনে বেরোয়, আবার তত সংখ্যকই প্রায় চলে আসে। অনেকেই ড্রাগের জন্যই রি-অ্যারেস্ট হয়। তাই ‘বিবর্তন’ দিয়েই এই চক্রে ইতি টানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সঞ্জয়ের কথায়, ‘এই বন্দিদের ডি-অ্যাডিকশন সার্টিফিকেট দেওয়ার পাশাপাশি কোনও কাজের সঙ্গেও যাতে যুক্ত করা যায় ও সে রোজগার করতে পারে, সে কথা ভাবা হয়েছে।
একাধিক সংস্থার সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা চলছে।’ ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের অ্যাডিশনাল এসপি থাকার সময় থেকেই সঞ্জয় নেশামুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। এনসিইআরটি টেক্সট থেকে ডারউইনের ‘বিবর্তনবাদ’ মুছে গেলেও কারা দপ্তরের দায়িত্বে আসার পরে সেই ‘বিবর্তন’-এর হাত ধরেই নেশামুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন ১৯৯২ ব্যাচের এই আইপিএস।