বন দপ্তরের গোপন গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, গত ১৫ দিন ধরে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের আশপাশের বেসরকারি রিসর্ট ও বনবস্তিগুলিতে বেশ কিছু কুখ্যাত চোরাশিকারি ও তাদের এজেন্টদের আনাগোনা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। এছাড়াও টানা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশের ব্যস্ততার সুযোগকেও কাজে লাগাতে চাইছে ওই আন্তর্জাতিক শার্প শ্যুটাররা। যে ভাবেই হোক, চোরাশিকারিদের এই নীল নকশা ভেস্তে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বন দপ্তর।
প্রজননের মরশুমে ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সমস্ত সংরক্ষিত অরণ্যে পর্যটকদের আনাগোনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই সময়ে ভিনরাজ্যের, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে আসা কয়েক জন ‘পর্যটক’-এর আনাগোনাকে একেবারেই সহজ চোখে দেখতে চাইছে না বন দপ্তর। ফলে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া বেসরকারি রিসর্ট ও হোটেলগুলিতে দিনে কমপক্ষে তিনবার মনিটরিং করার জন্য বিশেষ দল গঠন করেছে বন দপ্তর।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ২১৬.৫১ বর্গকিলোমিটার এলাকার আশেপাশে রয়েছে প্রচুর বনবস্তি ও সাধারণ জনপদ। ২০২১ সাল পর্যন্ত জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে যতগুলি গন্ডার হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগের তদন্তেই প্রমাণিত হয়েছে যে, বনবস্তির একেবারেই হতদরিদ্র পরিবারগুলিকে টার্গেট করে চোরাশিকারিরা।
আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সেখানে থেকে দিনের পর দিন গন্ডারদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালায়। এর পর সফল অপারেশন চালিয়ে শৃঙ্গ লোপাট করে পালায় অনায়াসেই। এছাড়াও বন দপ্তরের পর্যবেক্ষণে জানা গিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক চোরাশিকারিরা, গন্ডারদের গতিবিধির উপর নজরদারি করতে উপগ্রহ নিয়ন্ত্রিত যে ধরনের জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ডিভাইস ব্যবহার করে উঠতে শুরু করেছে, তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো প্রযুক্তি অথবা হাতিয়ার কোনও কিছুই নেই বন দপ্তরের হাতে। সেই কারণে দুর্যোগের মধ্যে জঙ্গলের যে সমস্ত দুর্গম অঞ্চলে বনকর্মীরা পা রাখতে পারছেন না, সেখানে ঘাপটি মেরে থেকে, অনায়াসে নিজেদের কাজ হাসিল করে পগারপার হয়ে যাচ্ছে ধূর্ত চোরাশিকারিরা।
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বলেন, ‘যেহেতু জলদাপাড়া সংলগ্ন এলাকায় আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চোরাশিকারিদের আনাগোনার তথ্য প্রমাণ পেয়েছি, ফলে সামান্য গাফিলতি হলেই বড় ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কমপক্ষে আগামী দেড় মাসের জন্যে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।’