দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে মনোনয়ন প্রক্রিয়া। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই চড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। সেই উত্তাপের আঁচ এসে পড়েছে হুগলির বলাগড়ে।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন বলাগড়ের বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুন্তল ঘোষ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বলাগড় ব্লকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চায়েত হল শ্রীপুর বলাগড় পঞ্চায়েত। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টিতে জয়ী হয়। নির্দল পেয়েছিল পাঁচটি, বিজেপি ও সিপিএম পেয়েছিল একটি করে আসন।
উল্লেখ্য, এই পঞ্চায়েতেরই বাসিন্দা কুন্তল ও শান্তনু। এমনকী, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুড়তুতো ভাইয়ের স্ত্রী সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রধান। কুন্তল এবং শান্তনুর গ্রেফতারি নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় হয়েছিল বঙ্গ। তাঁদের গ্রেফতারির কি কোনও প্রভাব পড়বে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটবাক্সে?
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, তৃণমূল জমানায় এলাকায় বিস্তর উন্নয়ন হয়েছে। সব ছাপিয়ে তাই মানুষ হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই আস্থা রাখবেন। আবার অনেকের কথায়, কুন্তল এবং শান্তনু দুই জনেই তৃণমূল নেতা ছিলেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁদের গ্রেফতারি মানুষের মনে একটা ছাপ ছেড়েছে বৈকি।
এলাকার বাসিন্দা শিশির চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শান্তনু, কুন্তল এখন জেলে। এই ঘটনার একটা বড় প্রভাব পড়েছিল সাধারণ মানুষের মনে। কিন্তু, এখানে বিরোধীরা সেভাবে সক্রিয় নন। তাঁদের সাংগঠনিক ক্ষমতাও অনেকটাই দুর্বল। বিজেপি বা সিপিএম মানুষের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখে না। তবে শান্তনুর যে দাপট এলাকাতে ছিল তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত পাঁচ বছর পঞ্চায়েতে ভালই কাজ হয়েছে।” অন্যদিকে, এলাকার বাসিন্দা বাপি দাস বলেন, ” নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। এর একটা বড় প্রভাব পড়বে ভোটে।” পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের একটা বড় প্রভাব পড়তে চলেছে বলেও দাবি করছেন এলাকার বাসিন্দা গৌতম মোদক।
অন্যদিকে, এসএফআই -এর জেলা সম্পাদক অর্ণব দাস বলেন, “হুগলি জেলা বিখ্যাত ছিল কৃষিতে। আর এখন বিখ্যাত হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতির কারণে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ রায় দেবে। ৮ তারিখ বাপি বাড়ি যা শটে তৃণমূলকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে উঠবে।”
সরব এলাকার গেরুয়া শিবিরও। প্রচারের ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি মামলাকেই হাতিয়ার করেছেন তাঁরা। বলাগড় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তপন দাস জানান, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন।
আদালত রায় দিলে এবং অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হলেই দুর্নীতি বলা সম্ভব। কুন্তল ঘোষ বলাগড় ব্লকে কোনদিন তৃণমূল করেনি। দল শান্তনু এবং কুন্তলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে।