জঙ্গলমহলে ভাঙছে কুড়মি ঐক্য, নীরবে ঘর গুছিয়ে নিয়েছে শাসকদল!


মৃত্যুঞ্জয় দাস: পঞ্চায়েতে জঙ্গলমহলে শাসকের বড় মাথাব্যথা কুড়মি ইস্যু। নেতৃত্ব অনড় থাকলেও ভাঙন ধরছে কুড়মি ঐক্যে। সমাজের নির্দেশ অমান্য করে বহু ক্ষেত্রে শাসক ও বিরোধী শিবিরের প্রার্থী কুড়মিরাই।

আরও পড়ুন-৬০ লক্ষের ব্যাঙ্ক ঋণ! গ্রল্ফগ্রিনে ২ টি ফ্ল্যাট, সায়নীর থেকে নথি চাইল ইডি 

সপ্তাহ ঘুরলেই রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে বাঁকুড়া সহ জঙ্গলমহলে শাসক দলের গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে কুড়মি ইস্যু। নির্বাচনে কুড়মি ইস্যু যে রাজ্যের জঙ্গলমহলে শাসক দলকে রীতিমত অস্বস্তিতে রেখেছে তা স্বীকার করছে তৃনমূলও। তবে কুড়মিদের মধ্যেও বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। আন্দোলনকারী সমাজ নেতৃত্বের ডাক অমান্য করেই শাসক তৃনমূল-সহ  অন্যান্য দলের প্রার্থী হয়েছেন কুড়মি সম্প্রদায়ের অনেকে। ফলে কুড়মি ভোট ভাগাভাগির অঙ্কও রীতিমত জটিল হয়ে উঠছে জঙ্গলমহলে।

কেন্দ্রের কাছে সি আর ই কমেন্ট ও জাস্টিফিকেশান পাঠানোর দাবিতে বছর খানেক আগে থেকে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে নিজেদের আন্দোলন তীব্রতর করে কুড়মি সমাজের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। রেল টেকা ডহর ছেকা, ঘাঘর ঘেরা-সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবিগুলিকে সরকারের কাছে তুলে ধরেন তাঁরা। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ায় নবজোয়ার কর্মসূচিতে গেলে তাঁকে আটকে কুড়মিরা জানান রাজ্য সরকার দ্রুত কুড়মিদের দাবি পূরণ না করলে সেক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুড়মিরা শাসক দলের পক্ষে থাকবে না।

এদিকে রাজ্য সরকারব্যবস্থা না নেওয়ায় কুড়মিদের একাধিক সামাজিক সংগঠন ঘোষণা করে এই গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুড়মিরা শাসক দলকে সমর্থন করবে না।  একই সঙ্গে তারা অন্য কোনো দলের পক্ষে থাকবে না বলেও জানিয়ে দেয়। এই ঘোষণার পর কুড়মি সমাজ নেতারা সিদ্ধান্ত নেয় জঙ্গলমহলে  পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে প্রার্থী না দেওয়া হলেও সবক্ষেত্রেই তারা নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জঙ্গলমহলের অধিকাংশ আসনে নির্দল প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে কুড়মিরা। আর তাতেই প্রমাদ গোনে রাজ্যের শাসক দল। শাসক দলের আশঙ্কা কুড়মি সমাজের কথা শুনে কুড়মি ভোট ব্যাঙ্ক নির্দলের পক্ষে গেলে সেক্ষেত্রে জঙ্গলমহলের বেশ কিছু ব্লকে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের বহু আসনে  অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়তে হবে তৃণমূলকে। কুড়মি ইস্যুতে বিপাকে পড়ার কথা কার্যত নির্বাচনের আগে স্বীকারও করে নিচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। তবে তাঁদের দাবি কুড়মি সমাজ আসলে বহুক্ষেত্রে ভোট ভাগাভাগি করে বিরোধীদেরই সুবিধা পাইয়ে দিতে চাইছে।

এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কুড়মিদের মধ্যেও ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে বিভাজন। সামাজিক সংগঠনগুলির ডাক অগ্রাহ্য করেই কুড়মিদের একটা অংশ সরাসরি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন। যার মধ্যে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলেই কুড়মি প্রার্থীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। কুড়মি নেতাদের দাবি, যে সমস্ত কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের আগামীদিনে বুঝিয়ে সমাজ আন্দোলনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে। সমাজ আন্দোলন ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করা দুটি বিষয়কে ভিন্ন প্রেক্ষিত হিসাবে দাবি করে পাল্টা সামাজিক নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তৃনমূলের কুড়মি প্রার্থীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে সামাজিক আন্দোলনে সামিল কুড়মি নেতারা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থী হওয়া কুড়মিদের মধ্যে এই  তরজার মাঝেই উঁকি দিচ্ছে একটি প্রশ্ন, নজিরবিহীন ভাবে কুড়মি ভোট ব্যাঙ্ক ভাগাভাগির অঙ্কে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ের মালা উঠবে কার গলায়?

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *