পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি ইডির সম্মুখীন না হয়ে বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করতেন, তা হলে ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে যেতেন। অনুব্রত মণ্ডল যদি ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের মুখোমুখি না হয়ে বিজেপিতে গিয়ে পদ্মফুলের ঝান্ডা হাতে নিতেন, তা হলেই ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে যেতেন।’ স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থর বিরুদ্ধে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ থাকার যুক্তিতেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সাসপেন্ড করেছিল। অভিষেক নিজেও পার্থর বিরুদ্ধে পারিপার্শ্বিক প্রমাণ থাকার যুক্তি দিয়েছিলেন।
পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও পার্থ জেল থেকে আদালতে যাতায়াতের পথে একাধিকবার বলেছেন, তিনি তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছেন। পার্থকে সাসপেন্ড করা হলেও গোরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টকে সিবিআই গ্রেপ্তার করার পরে বীরভূমের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও পদক্ষেপ করেননি।
পার্থ ও অনুব্রত দু’জনেই জোড়াফুলের হেভিওয়েট নেতা হলেও দু’জনের প্রতি অবস্থান কেন এক নয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। অনুব্রতর হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূলের নেতৃত্ব সওয়াল করলেও কেউ প্রকাশ্যে পার্থর পাশে দাঁড়াননি। অনুব্রতর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই বলে তৃণমূলের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটেই অভিষেকের এদিনের মন্তব্য খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন জোড়াফুল নেতৃত্ব।
তাঁদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, এতদিন পার্থ ও অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে তৃণমূল পৃথক অবস্থান নিলেও অভিষেকের এই বক্তব্যে দুই নেতাকে একই বন্ধনীতে রাখা হয়েছে। বিজেপিতে যোগ দিলে কী ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের আওতার বাইরে যাওয়া যায়, তার যুক্তি হিসেবে মহারাষ্ট্রে এনসিপিতে ভাঙনের উদাহরণ দিয়েছেন অভিষেক।
তিনি বলেন, ‘দু’দিন আগে মহারাষ্ট্রে অজিত পাওয়ার এনডিএ-তে যোগদান করেছেন। ন’জন মন্ত্রী শপথগ্রহণ করেছেন। এঁদের সবার বিরুদ্ধে কিন্তু ইডির মামলা চলছিল। সাতদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এনসিপি দুর্নীতিগ্রস্ত পার্টি, যারা ৭৩ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করেছে। পরের দিন দেখা গেল, যাঁদের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত চলছিল, তাঁরা সবাই বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন।’
অজিত-ব্রিগেডের মতোই পার্থ-অনুব্রত যদি বিজেপিতে যোগ দিতেন, তা হলে তাঁদের জেলে যেতে হতো না-এ কথাই অভিষেক বোঝাতে চেয়েছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ। এদিন অভিষেক বলেন, ‘তৃণমূলের কারও বিরুদ্ধে যদি চুরির অভিযোগ আসে, তাহলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকেও দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। গত ছ’মাসে ছ-সাত জন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে ইস্তফা দিতে হয়েছে। জেলা পরিষদের নেতাকেও ছাড়া হয়নি।’ পার্থর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এসেছে বলে অভিষেক মন্তব্য করলেও এই অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে–এমন কথা এ দিন আর তিনি বলেননি।