সুতপা সেন ও শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের যে ট্রেন্ড তাতে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধীরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থারগুলির তত্পরতার প্রভাবের উপরে ভরসা করে পঞ্চায়েতের ময়দানে নমেছিল বিরোধীরা। কিন্তু ভোটের ফলাফলের প্রবণতা অন্তত বিরোধীদের পক্ষে যাচ্ছে না। বরং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এত চাপের মধ্যেও আশাতীত ফল করেছে শাসকদল।
আরও পড়ুন-আন্দোলনের আঁতুরঘর সিঙ্গুর সবুজই, জমি পেল না বিরোধীর
এখনওপর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফলে শাসকের দাপট স্পষ্ট। সন্ধে সাতটা পর্যন্ত যে ফল প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে জেলা পরিষদের ৯২৮ আসনের মধ্যে ৬৮ আসনে তৃণমূল ও একটি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৯,৭৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫৬ আসনে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। জিতেছে ১২৯ আসনে। বিজেপি এগিয়ে ৬৫ আসনে। জয়ী হয়েছে ৯ আসনে। সিপিএম জয়ী হয়েছে ৩ আসনে। অন্যদিকে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২২৯ আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এগিয়ে ৩৪৩৭৮ আসনে। ফলে বোঝাই যায় কীভাবে বিরোধীদের পেছেন ফেলে দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। এবার ভোট শতাংশের হিসেব সামনে রাখলেই বোঝা যায় তৃণমূলে ক্ষমতা।
মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৫২.২২ শতাংশ ভোট। অর্থাত্ এখনওপর্যন্ত পাওয়া ফলাফলের নীরিখে অর্ধেক ভোটে পেয়েছে ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে, বিজেপি পেয়েছে ২২.৬৯ শতাংশ ভোট। সিপিআই পেয়েছে ০.১৪ শতাংশ ও সিপিএম পেয়েছে ১২.৫৪ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে, কংগ্রেস পেয়েছে ৫.৫৭ শতাংশ ও ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে ০.২৪ শতাংশ ভোট।
এদিকে, ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হতেই সোশ্য়াল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্যুইট করে তিনি লেখেন, বিরোধীরা প্রচার করেছিল নে ভোট টু মমতা। তাদের সেই আবেদনকে ধাক্কা দিয়ে এখন মানুষ বলতে চাইছেন নাউ ভোট ফর মমতা। মানুষের সমর্থনে আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হব। বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ। মূল স্রোতের সংবাদমাধ্য়মের দুঃখের সামনে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের সম্মিলিত হাতাশাও ফিকে হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে কুত্সাও মানুষকে মানুষকে ভুল বোঝাতে পারেনি। উল্লেখ্য, শুভেন্দু অধিকারী যখনও বক্তব্য রাখেন তখনই তিনি অভিষেক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে থাকেন। সম্প্রতি তিনি বারংবার বলছিলেন, নো ভোট টু মমতা। শুভেন্দুর সেই স্লোগানকেই ফলাফলের নীরিখে পাল্টা আক্রমণ করলেন অভিষেক।
এই ভোটের ফলাফল নিয়ে কী বললেন শুভেন্দু অধিকারী?
বিরোধীরা যেমনটা আশা করছিল তার কাছাকাছি যেতে পারেনি বিরোধীরা। এনিয়ে শাসকদলকেই নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। জি ২৪ ঘণ্টাকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ভোট হয়নি। লুঠ হয়েছে। আজকে গণনার সময়ে প্রার্থী ও এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জেতার পরেও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। সাঁকারাইলে বিজেপির জয়ী প্রার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। আমি সেইদিনই সুখী হব যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করতে পারব। অভিষেকের ট্যুইট করার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। এর কোনও প্রভাব বাংলার মানুষের কাছে হবে না। কারণ উনি বাংলার মানুষের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। ডায়মন্ডহারবার লোকসভাতেই ওঁকে সবক শেখাব। মাত্র চারশো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দিয়েছে। ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলা হয়েছে। সেখানে রিপোল হয়নি। এর ফল কতটা মারাত্মক হবে তা দেখবেন বাংলার মানুষ।