কৃষকদের জমি আন্দোলনে পরবর্তীকালে যোগ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হাত ধরেই গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন। ২০০৮ সালে সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল তৃণমূল। সেই বছরই রাজ্যে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ দখল করেছিল তারা। সেই যে শুরু, তারপর থেকে ২০০৯ লোকসভা, ২০১০ পুরসভা, ২০১১ ও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে সিঙ্গুর মুখ ফেরায়নি তৃণমূলের থেকে। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ভোটের নিরিখে এই আসনে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে ক্ষত সারিয়ে ২০২১ বিধানসভায় সিঙ্গর থেকে জেতেন তৃণমূল প্রার্থী।
উল্লেখ্য, সিঙ্গুরের উপর ভর করে বিপুল জনমত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরের মানুষ মমতাকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন। মমতাও সিঙ্গুরের মানুষকে ভোলেননি, কথা রেখেছিলেন ২০১৬ সালে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দিয়েছেন। আরও একবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে দু’হাত ভরে তৃণমূলকে ভোট দিল সিঙ্গুরের মানুষ।
২০২১ এ যদিও প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য তৃণমূলের বিজয়রথ আটকানো যায়নি। বেচারাম মান্নার কাছে পরাজিত বিজেপির রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে পরে মন্ত্রী হন বেচারাম। তাঁর নেতৃত্বে সিঙ্গুরে এই জয় বলে দাবি সেখানকার শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিঙ্গুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়ে পঞ্চায়েতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন । এবারেও পঞ্চায়েতে সিঙ্গুরের বেশ কয়েকজন কে প্রার্থী করা হয়নি । তাদের মধ্যে অন্যতম আন্দোলনের মুখ দুধ কুমার ধারা। যিনি সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন । বেরাবেড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান দীপঙ্কর ঘোষ এরকম আরো কয়েকজনকে দল এবারে টিকিট দেয়নি, তাতে অবশ্য তৃণমূলের জয়ে কোন প্রভাব পড়েনি । ষোল শূন্য এই ফলই বলে দিচ্ছে সিঙ্গুর এখনো তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি।
সিঙ্গুরে জয় নিয়ে হুগলি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরিন্দম গুইন বলেন, ‘এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ হয়েছে। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছে। মানুষ সম্পূর্ণ আস্থা-ভাষা বিশ্বাস রায় দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে। সিঙ্গুর সহ হুগলি জেলার মানুষকে ধন্যবাদ।’ হুগলি সংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি তুষার মজুমদার বলেন, ‘সিঙ্গুরে গণনা করতে দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়ন করা হয়নি শাসক দল নিজেরাই নিজেদের মধ্যে গণনা করেছে। আবার জয় হলে বিজেপিই জিতবে।’