শুরুটা সেই বাম আমল থেকে। পরিবর্তনের ১২ বছরেও বাংলার ভোট-সন্ত্রাসের চিত্র ‘যে কে সেই’। শনিবারের পঞ্চায়েত ভোটে ফের একবার বেআব্রু হয়েছে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কদর্য ছবি। চলেছে গুলি। মুহুর্মুহু বোমার আওয়াজে কেঁপে উঠেছে চারপাশ। তাজা রক্তে ভিজেছে গ্রামের রাস্তা। বিভিন্ন মহল থেকে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিহার-উত্তর প্রদেশ পেরেছে, বাংলা কবে পারবে?
এই সময় ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় বাংলার ভোট সন্ত্রাস নিয়েই মুখ খুললেন টলিউডের নামজাদা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। কাকতালীয়ভাবে তিনি ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়কও বটে। ভোটের দিন হিংসা, হানহানি নিয়ে রাজের মুখে একদিকে যেমন শোনা গিয়েছে ‘নিন্দার সুর’। অন্যদিকে বাম আমলে সচক্ষে দেখা ‘হিংসা’ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাঁর গলায়।
এই সময় ডিজিটালের মুখোমুখি হয়ে রাজ বলেন, ‘যখন থেকে জ্ঞান হয়েছে, আমি দেখে এসেছি ভোট মানেই খুন। ভোট মানেই রক্তারক্তি, ছাপ্পা। ছোটোবেলা থেকে আমি এইসব দেখেই বড় হয়েছি। যখন কাঁচপাড়ায় থাকতাম তখন দেখেছি যে কীভাবে কংগ্রেস সমর্থকদের ভোটই দিতে দেওয়া হত না, রাতের অন্ধকারে বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হত। তখনও তৃণমূল তৈরি হয়নি। নিষেধ সত্ত্বে ভোট দিতে এলে তাঁকে মারধর করা হত। তবে এখন তুলনামূলকভাবে হিংসার ঘটনা কম।’
রাজ আরও বলেন, ‘আমি নিজে বিশ্লেষণ করে দেখেছি। আমরা বলি ভোট উৎসব। কিন্তু এই উৎসবের দিন যে যাঁর মতো পালন করেন। তাতে দলের কতটা নির্দেশ বা অনুমোদন থাকে আমি জানি না। তবে কিছু মানুষ উৎসব পালন করার চোটে কে মারা গেলে, কার ক্ষতি হল বা সারা বিশ্বের কাছে আমরা কতটা লজ্জিত হলাম, সেই সবের পরোয়া করেন না। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট খুবই সুষ্ঠভাবে হয়েছে। আমি নিজে প্রার্থী হিসেবে সামনে থেকে সেটা দেখেছি।’
পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার ঘটনা ঘটনা ঘটলেও গোটা রাজ্যের সামগ্রিক ছবি এমনটা নয় বলে দাবি পরিচালকের। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে অনেক জায়গায় পঞ্চায়েতের প্রচারে গিয়েছি। যতটা দেখানো হচ্ছে, পরিস্থিতি এতটাও খারাপ নয়। অনেক ভালো কিছুই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। ভুল প্রচারের ফলেও অনেক সময় উত্তেজনা তৈরি হয়।’
ভোট মানেই হিংসা। এই পরিস্থিতির বদল কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন তৃণমূল বিধায়ক? রাজ বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না ঠিক কী করলে এই হিংসা, হানাহানি বা রক্তপাত বন্ধ হবে। মানুষের মানসিকতা অবশ্যই পরিবর্তনের প্রয়োজনীতা রয়েছে। যাঁরা তৃণমূল স্তরে রাজনীতি করেন, তাঁদের অনেক বেশি শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মানুষের উপর আস্থা রাখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দলের নাম করে কেউ কেউ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন। ভোটের দিন মারামারি করা অনেকের কাছে নেশার মতো। এতে আখেরে দলেরই বদনাম হয়। আগের তুলনায় পরিস্থিতির অনেকটাই বদল হয়েছে। তবে ভোটে রক্তপাত সম্পূর্ণ বন্ধ হোক, এটাই আমি চাই। এটা সম্ভব হলে আমরা সবাই গর্বিত হব।’