শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত একের পর এক মৃত্য়ুর ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের দাবি, সেন্ট্রাল ফোর্সকে এনেও বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তার ফলেই ভোটের দিনে এত মৃত্যু। আজ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ভোটের দিনই রাজভবনে জমা হয়েছে ৭ হাজার অভিযোগ। এবার রাজভবনে জমা হওয়া সব অভিযোগ আদালতে জমা দিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল। এমনটাই সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন-‘রাজ্যে ৪৭ জনের মৃত্যু; উনি বলছেন আমার কী দোষ! ভগবানের ভরসায় বেঁচে রয়েছি’
রাজভবন সূত্রে খবর, ভোটে হিংসা সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে সাত হাজার অভিযোগ জমা পড়েছিল রাজভবনের পিস রুমে। ভোটে অনিয়ম ও সন্ত্রাস নিয়ে মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলায় রাজভবনে জমাপড়া সব অভিযোগ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ওইসব অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দিয়েছিল রাজভবন।
উল্লেখ্য, যে অভিযোগ সম্বলিত সিল খাম কমিশনে পাঠানো হয়েছিল তার সঙ্গে রাজ্যপাল একটি নোটও পাঠান কমিশনে। সূত্রের খবর সেই নোটে লেখা হয় ওইসব অভিযোগের যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত ও বিচার হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যেন নির্বাচনের ফল স্থগিত রাখা হয়। তার পর ওইসব অভিযোগ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হল।
রাজ্যপালের ওই নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যপাল যদি ওই নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাহলে তা প্রত্যাশিতই ছিল। রাজ্যপাল গোটা রাজ্যে ঘুরে বেরিয়েছেন। ভোটের সময় তিনি রাজভবনে পিস রুম খুলেছিলেন। তাঁর কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু দিনের শেষে নির্দেশ পালন করবে তো সেই রাজ্য পুলিস ও নির্বাচন কমিশন। তারা কী করেছে রাজ্যের মানুষ তা দেখেছে। একটা নাটক তৈরি করা হল। ৭০০ বুথে রিপোল হল। তারপর গণনা কেন্দ্রে কী হয়েছে সবাই দেখেছেন। এমন এমন জায়গায় রিপোল হয়েছে যে সেখানে ফের ভোটের কোনও দরকারই ছিল না। বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। একটা সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্যায়ন হয়েছে। এতে পুলিস পপ্রশান সবাই জড়িত ছিল।
এনিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, এই ভোট আমাদের বাংলার মাথা নিচু করে দিয়েছে। একটার পর একটা রেকর্ড। চাকরির পরীক্ষায় পাস করেও চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে রয়েছেন। আর চাকরি বিক্রির টাকায় ফেল করা ছেলেরা মাস্টারি করছে। এরা পরের প্রজন্মটা শেষ করে দিয়েছে। কাউন্টিংয়ে যারা জিতেছে তাদের সির্টিফিকেট না দিয়ে অন্য কাউকে তা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ বিডিও নেয়নি, ওসি নেয়নি। কোর্টকে এখন বলতে হয়েছে যারা জিতেছে বলে সার্টিফিকেট পেয়েছে তা এখন কার্যকারী করা যাবে না। এখন কোর্টের উপরেই মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে।
সি ভি আনন্দ বোসের ওই নির্দেশ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, রাজ্যপালের পিস রুমের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েই বড় প্রশ্ন রয়েছে। রাজ্যের একজন সাংবিধানিক প্রধান কীভাবে এমন কাজ করেন। আসলে উনি তাঁর পূর্বসুরি জগদীপ ধনখড়কে অনুসরণ করছেন। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা দেখার জন্য প্রশান রয়েছে। কিন্তু রাজ্যপাল যে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন তার কোনও সাংবিধানিক বৈধতা নেই।